বেড়াতে কে না ভালোবাসে? কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। অবারিত সবুজের মধ্যে একটুখানি প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে মানুষ বের হয় তার চেনা গণ্ডি ছেড়ে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ প্রতিনিয়ত খুঁজে ফেরে নতুন নতুন জায়গা।
ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুর—এই তিন জেলার সীমানার কাছাকাছি এলাকাজুড়ে আছে পেয়ারা বাগান। শুধু বাগানই নয়, পেয়ারার বেশ বড় ভাসমান বাজার রয়েছে এখানে। ধান-নদী-খাল—এই তিনে বরিশাল। একসময় বরিশাল অঞ্চলকে ‘বাংলার ভেনিস’ বলা হতো। এই বরিশাল দিনে দিনে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে। আর এই পেয়ারার ভাসমান বাজার পর্যটকদের কাছে এখন জনপ্রিয়।শত বছরের পুরনো এই হাটের আশেপাশে আছে দুইশত বছরের পুরনো পেয়ারা বাগান। যেসব বাগান থেকে উৎপাদন হয়ে লক্ষাধিক মণ পেয়ারা।
ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, কাপড়কাঠি, কাঁচাবালিয়া, ভীমরুলি, হিমানন্দকাঠি, শতদশকাঠি, রামপুর, মীরাকাঠি, শাওরাকাঠি, জগদীশপুর, আদমকাঠি এবং পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার আটগড়, কুরিয়ানা, বংকুরাসহ আরও কিছু গ্রামে প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়। দেশে উৎপাদিত মোট পেয়ারার প্রায় ৮০ শতাংশই উৎপাদিত হয় এই অঞ্চলে।
সাধারণত পেয়ারার মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে, চলে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে অন্যতম আটগড় বাজার ও ভিমরুলী বাজার। বর্ষাকাল এলেই ঝালকাঠির পেয়ারা বাগানগুলো ভরে যায় ফলে ফলে। এসব বাগান থেকে সংগৃহীত পেয়ারা বিক্রি হয় নৌকায় করে।
ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই অসংখ্য পেয়ারা বাগান। এসব গ্রামে দৃষ্টিপথে ধরা দেবে সবুজের সমারহ। এসব সবুজের বেশিরভাগ হোগলা, সুপারি, আমড়া আর পেয়ারার বন। এসব বাগান থেকে চাষীরা নৌকায় করে সরাসরি এই বাজারে নিয়ে আসেন।
ভিমরুলির বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হল দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। এ সময়ে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। শুধু পেয়ারা বাজারই নয়, ছোট্ট নৌকা কিংবা ট্রলারে দুই পাশে পেয়ারা বাগানের মাঝখান দিয়ে খালে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যটাও বেশ উপভোগ্য।
আটঘর কুড়িয়ানা খালের ভাসমান পেয়ারার হাট দেখে পর্যটকেরা নৌপথে যাচ্ছেন ঝালকাঠির ভীমরুলি ভাসমান হাটে। এই তিন কিলোমিটার নৌপথের দুই ধারে রয়েছে বহু পেয়ারাবাগান। এসব বাগানের কয়েকটিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তোলা হয়েছে বিনোদনকেন্দ্র ও পিকনিক স্পট। পর্যটকেরা এসব বিনোদনকেন্দ্রে যাত্রাবিরতি করেন।
বরিশালের আমড়ার খ্যাতি শোনেনি, এমন মানুষ খুব কম আছে। পেয়ারা আর ইক্ষুর মৌসুম শেষ হলে বাজারে আসে আমড়া। এ অঞ্চলে আমড়ার ফলনও সর্বত্র। আমড়ার মৌসুমেও বেশ জমজমাট থাকে এই বাজার। আর সব শেষে আসে সুপারি। সবজি তো আছেই। মোট কথা, সারাবছরই বেচাকেনা চলে এই বাজারে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যোগাযোগ সহজ হওয়ায় পেয়ারার বাগানগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।