বুধবার, ০১:১৮ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ইউরোপের মানুষের উচিত একবার হলেও বাংলাদেশে আসা: নাতালিয়া

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৮২ বার পঠিত

পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশের মেয়ে নাতালিয়া নাতাশা। কখনো কি ভেবেছিলেন তার পাতে উঠবে বাংলাদেশের নদ-নদীর মাছ? গায়ে মাখবেন এ দেশের সবুজ-শ্যামলিমার হৃদয় শীতল করা হাওয়া। বৈবাহিক সূত্রে নাতালিয়া এখন বাংলাদেশে। খাচ্ছেন ইলিশ ভাজা। ঘুরছেন কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে অলি-গলি। ভাসছেন শ্বশুরের দেশের মানুষের শুভেচ্ছায়।

নাতালিয়াকে চিনতে এতদিনে কারও বাকি নেই। বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ছেলে হাবিবুর রহমানের স্ত্রী তিনি। তাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব: দ্য মিক্সম্যাচ ফ্যামিলি’ ও ফেসবুক পেজ ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব’ দুজনকে পরিচিত করেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙালিদের কাছে। প্রতিদিন এই দম্পতির সাংসারিক খুনসুটি ও মজার মজার ভিডিও দেখছে লাখ লাখ মানুষ। এই যুগলের আছে ফুটফুটে এক কন্যা। নাম তার নাদিয়া।

হাবিব-নাতালিয়া বিয়ে করেছেন ২০১৭ সালে। তবে গত ২০ ডিসেম্বর এই দম্পতি বাংলাদেশে আসেন। পরদিনই রাজধানীর মিরপুরের বাসার ছাদে গায়ে হলুদ করেন। আর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ২৩ ডিসেম্বর। যেখানে ছিল বাঙালিয়ানার ছাপ।

বিয়ের এত বছর পর অনুষ্ঠান করার কারণ হিসেবে হাবিবুর বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিসহ নানা কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি। এখন পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে বলে স্ত্রী-সন্তানকে বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এতসব আয়োজন।

তিনি জানান, ৭ জানুয়ারি তারা জার্মানি ফিরে যাবেন। তার আগে যাবেন স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারে। ঘুরবেন পর্যটনের নগরী কক্সবাজার ও চা বাগান এলাকা। যাবেন গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ। সেখানকার মাটি-মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন স্ত্রী-সন্তানকে।

সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর শীতে ফের বাংলাদেশে আসার ইচ্ছের কথা জানালেন এই দম্পতি।

যেভাবে পরিচয়-পরিণয়
হাবিবুর রহমান পেশায় প্রকৌশলী। আর বেলারুশের রাজধানী মিনস্কের কাছাকাছি শহর বাবরুস্কের মেয়ে নাতালিয়া পেশায় ফার্মাসিস্ট। হাবিব ২০১২ সালে জার্মানির মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করতে যান। সেখানে বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের স্টেডিয়ামে ‘স্টুডেন্ট জব’ করতে গিয়ে পরিচয় নাতালিয়ার সঙ্গে। অল্প সময়ই তা রূপ নেয় প্রেমে। ২০১৭ সালে ধর্মীয়ভাবে বিয়ের পর আবার ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির নিয়মনীতি মেনে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়।

হাবিব এখন জার্মানির একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটিং ফার্মে ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। নাতালিয়া কাজ করছেন ফার্মাসিস্ট হিসেবে। তারা থাকছেন জার্মানির পূর্বাঞ্চলের সাক্সনি অঙ্গরাজ্যের কেমনিজ শহরে।

২০২০ সালের অক্টোবরের শেষে শখের বশেই ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব-দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি’ নামে ইউটিউব চ্যানেল ও ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবি’ নামে ফেসবুক পেজ খোলেন তারা। নিত্যদিনের কাজ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক বার্তামূলক ভিডিও তৈরি করে সেখানে পোস্ট করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তাদের অনুসারী বাড়তে থাকে।

এখন এ দুজনের ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব’ ফেসবুক পেজে অনুসারীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ প্রায়। আর ইউটিউবে ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব-দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি’ চ্যানেলে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার। তাদের নিত্যদিনের খুনসুটির পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতামূলক সব ভিডিও এই পেজ ও চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষের কাছে।

এই দম্পতি জানান, তারা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করতে চান। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সচেতনতামূলক ভিডিও বানানো ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করতে চান হাবিব-নাতালিয়া।

বাংলাদেশে যে অভিজ্ঞতা হলো নাতালিয়ার
শ্বশুরের দেশে এসে সালোয়ার–কামিজ পরেছেন নাতালিয়া। তিনি মুগ্ধ এ দেশের মানুষের আতিথেয়তায়। মজেছেন এ দেশের জাতীয় মাছ ইলিশেও। নাতালিয়ার আক্ষেপ, বিদেশে যদি ইলিশ পাওয়া যেতো, তাহলে প্রায়ই রান্না করতেন।

অবশ্য সড়কে আবর্জনা ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কষ্ট ছুঁয়ে গেছে নাতালিয়াকে। তিনি বলেন, ইউরোপের মানুষের উচিত বাংলাদেশে একবার হলেও এসে ঘুরে যাওয়া। তাহলে তারা বুঝবে তাদের সমস্যা কত ছোট। বাংলাদেশের মানুষ কত সমস্যা-কষ্ট নিয়ে হাসিমুখে কথা বলেন।

বিদেশি বউ পেয়ে খুশি পুরো পরিবার
নাতালিয়ার মতো বউ পেয়ে খুশি হাবিবুরের মা দেলোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, বিদেশি বউ অনেক ভালো। সব সময় খোঁজখবর নেয়। বাংলাদেশি খাবার অনেক পছন্দ করে। নাতনি নাদিয়া তো দাদি বলতেই পাগল।

হাবিবুরের বড় ভাই আজহার মাহমুদ বলেন, বিদেশ থেকেই পরিবারের সবার খোঁজ রাখে নাতালিয়া। জন্মদিনে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরিবারের সবাইকে উইশ করে। পরিবারের সবার খোঁজখবরও নেয় নিয়মিত।

হাবিবুরের পছন্দের খাবার
শ্বশুরবাড়ি বেলারুশে একবার গিয়েছিলেন হাবিবুর। যত্নআত্তি কম হয়নি সেখানে। নানা রকম পিঠা, মাছ, মাংসের গ্রিল দিয়ে আপ্যায়িত হয়েছেন সেখানে। হাবিবুর জানান, শ্বশুরের হাতে তৈরি মুরগির গ্রিল অনেক পছন্দ তার।

বিয়ের আয়োজনে যে উপহার পেলেন এই দম্পতি
যদিও বিয়ের পর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনেক দেরিতে হয়েছে। তবে এই আয়োজনও আনন্দ-উৎসবে ভাসিয়েছে হাবিব-নাতালিয়ার স্বজনদের। এই অনুষ্ঠানে জামা-কাপড়, শো-পিসসহ দারুণ সব উপহার পেয়েছেন নাতালিয়া। তিনি বলেন, কাঠে বাঁধানো ছবির ফ্রেম, মাটির শো-পিস খুব সুন্দর।

স্বামী সম্পর্কে নাতালিয়া বলেন, হাবিব অনেক মেধাবী, যত্নবান, দয়ালু ও সুন্দর মনের মানুষ।

মেয়ে নাদিয়া সম্পর্কে মা-বাবার বক্তব্য, সে একজন স্টার। মানুষ নাদিয়াকে এত পছন্দ করে সেটা বাংলাদেশে না এলে বুঝতে পারতেন না তারা। একদিন বাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে দেখেন লোকজন দুজনকে নাদিয়ার বাবা নাদিয়ার মা বলে ডাকছিল। নাদিয়া হাসিমুখে খেলছে। সুন্দর বাংলা বলছে। নাদিয়ার ফ্যান-ফলোয়ার আমাদের চেয়েও বেশি।

সুত্রঃ জাগো নিউজ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com