বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদী পথে আসতে শুরু করেছে কোরবানির গরু। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পশুর হাটে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারিরা আসছেন গরু নিয়ে। ইতোমধ্যে প্রস্তুত হচ্ছে কোরবানির পশুর হাট। নারায়ণগঞ্জে আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বসতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। এসব হাটে ইতোমধ্যে বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। চলছে ত্রিপল, কাউন্টারসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম।
গতকাল শুক্রবার ফতুল্লা ডিআইটি মাঠ ও বন্দরের নবীগঞ্জ পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। হাটে হাটে ইতোমধ্যে বসেছে পুলিশের বিশেষ নজরদারি দলের পাহারা। নদীপথেও গরুর ট্রলারে ডাকাতি, চাঁদাবাজি রোধে সক্রিয় রয়েছে নৌপুলিশ।
সিরাজগঞ্জের ব্যাপারী আজগর আলী মুন্সী জানান, আমি আটটি এবং আমাদের সাথের কয়েকজনের একাধিক করে গরু নিয়ে এসেছি হাটে। এখনো হাট বসেছি, খুঁটি বসানো হয়েছে। এবার গো খাদ্যের দাম বেশি গেছে। বন্যায়ও আমাদের অনেক সমস্যা হয়েছে। গরুর দাম এবার বেশি। এবার লাভ করতে পারবো বলে আশা রাখি। তবে হয়তো তেমন ভালো লাভ নাও হতে পারে।
ফতুল্লা হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বশির মিয়া । তিনি জানান, এবার গরুর দাম বেশি হবে । কারণ বন্যার কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। কষ্ট করে কোরবানির জন্য গরু লালন-পালন করতে হয়েছে। এছাড়া গো-খাদ্যের দাম বেশি। সব মিলেয়ে একটা ন্যায্য দাম পাওয়ার আশা করি।
এদিকে ঈদুল আযহা উপলক্ষে নৌপথে প্রতি বছরই গরু সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। ট্রলার থেকে গরু ছিনিয়ে নিয়ে নিজ নিজ হাটে তোলার অপতৎপরতা শুরু হয়ে। টানাটানি করতে গিয়ে গরুবোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনাও আগে অনেকে ঘটেছে। তবে গরু সন্ত্রাসীদের রোধে তৎপর পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, এবার হাটগুলোকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি রোধ, জাল টাকার বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা থাকবে। পথে পথে গরু আসতে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি যেন না হয় সেদিকেও বিশেষভাবে বলা হয়েছে নজর রাখতে। কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কেউ যেকোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা করতে না পারে সেদিকেও আমরা সাদা পোশাকে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি করছি।
নারায়ণগঞ্জ নৌপুলিশের এসপি মীনা মাহমুদা জানান, একজন ব্যাপারি অনেক কষ্ট করে তার পশু পালন করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। তার গরুর রশি ধরে টান দেয়া হবে, তা হবে না। সে যে হাটে ইচ্ছা সেই হাটেই যাবে। তাকে জোর করে কোথাও নামানো যাবেনা। নৌ পথে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি রোধে বাড়তি টহল ও নিরাপত্তা জোরদার করেছি। আলাদা বিশেষ বোট ভাড়া করা হয়েছে, বাড়তি তেল দেয়া হচ্ছে। বাড়তি ফোর্স থাকছে নৌ পথে। আশা করি, কোথাও কোনো অভিযোগ থাকবে না, যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্রে টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টাই মনিটর করা হবে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে। আমরা অতিরিক্ত বোট ভাড়া করেছি এবং বাড়তি সদস্য নিয়োজিত করেছি। আমাদের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদি কেউ কোনো ধরনের অপরাধ নৌপথে করতে চান তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি জানান, অভিযোগ থাকে গরুর ব্যাপারি তাদের ইচ্ছামতো হাটে যেতে চাইলেও অনেক সময় রশি টেনে তাদের জোর করে থামিয়ে গরু নামিয়ে নেয়া হয়। এ ধরনের কাজ করতে দেয়া হবে না। কেউ এ ধরনের চেষ্টা করলে তাকে সাথে সাথে আইনের আওতায় আনা হবে। ব্যাপারীরা যে হাটে ইচ্ছা সে হাটে গরু নামাবেন। নৌপথে কোনো চাঁদাবাজি কিংবা ডাকাতির শঙ্কা নেই তবে আমাদের নজরদারি সব সময় থাকবে। কোনো অভিযোগ পেলেই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।