রবিবার, ১২:০৪ অপরাহ্ন, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

অগ্নিপথে অগ্নিগর্ভ ভারত : বিপাকে বিজেপি!

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২
  • ৮৫ বার পঠিত

ভারত সরকারের প্রণীত ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ ভারত। এখন পর্যন্ত ওই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ নিয়ে সরাসরি একটি শব্দও খরচ করেননি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বেঙ্গালুরুতে সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে খারাপ মনে হলেও, ভবিষ্যতে তাতে লাভই হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, প্রধানমন্ত্রী পরোক্ষে যুবসমাজকে অগ্নিপথ প্রকল্পের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

যদিও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, যেভাবে ওই প্রকল্পের বিরোধিতা শুরু হয়েছে, তাতে কৃষি আইনের মতো অগ্নিপথ প্রকল্পও প্রত্যাহারের রাস্তায় হাঁটতে হতে পারে সরকারকে। শাসক শিবিরের রক্তচাপ বাড়িয়ে বিরোধীদের সুরেই ওই প্রকল্পের বিরোধিতায় সরব জোটসঙ্গী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ-ও। এমতাবস্থায়, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ মঙ্গলবার তিন বাহিনীর প্রধানদের সাথে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতায় যেভাবে যুবসমাজ পথে নেমেছে তাতে কপালে ভাঁজ পড়ছে পদ্ম শিবিরের নেতাদের। ভারতজুড়ে অগ্নিপথ প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বেঙ্গালুরুতে সোমবারই মোদি বলেন, ‘সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত প্রথমে খারাপ লাগলেও, পরে তা লাভজনক হয়ে দাঁড়ায়।’

রোববারই সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে দিয়েছে, অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু ভারতজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সরকারের মাথাব্যথা বহু গুণে বাড়িয়েছে। সূত্রের খবর, অগ্নিপথ প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি জারি, প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে সেনাবাহিনীকে পড়তে হচ্ছে, চার বছরের শেষে অগ্নিপথ প্রকল্পে যোগদানকারী অগ্নিবীরদের কিভাবে পুনর্বাসন দেয়া সম্ভব এবং এ নিয়ে সেনাবাহিনী কী ভাবছে- এই সব বিষয় আজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সামরিকপ্রধানদের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি তরুণ সমাজ। ওই ক্ষোভের আগুন যে তাদের বিশেষভাবে চিন্তায় ফেলেছে, তা দলের অন্দরে মেনে নিচ্ছেন অনেক বিজেপি নেতাই। তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকেরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। আন্দোলন মূলত সীমাবদ্ধ ছিল দিল্লি-সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে। তাতেই এক বছর আন্দোলনের শেষে ওই আইনগুলো প্রত্যাহার করেছিল সরকার। কিন্তু বিজেপির পিছন থেকে সরে যায় কৃষক সমাজের একাংশ। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত সোমবার জানিয়েছেন, আগামী ২৪ জুন দেশজুড়ে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে সংযুক্ত কিসান মোর্চা। ওই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ইতিমধ্যেই গো-বলয় ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতেও। তেলঙ্গানায় একজনের প্রাণও গিয়েছে ওই বিক্ষোভ-আন্দোলনে।

বিজেপি শিবিরের একটা অংশের মতে, আন্দোলনকারীদের ওপর বেশি বলপ্রয়োগ করলে, হিতে বিপরীতের আশঙ্কা। একইসাথে, ওই আন্দোলন স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারতের বেকারত্ব সমস্যাকেও। বিরোধীদের মতে, মোদি জমানায় বেকারত্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। সেই ক্ষোভে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে অগ্নিপথ প্রকল্প। অথচ, সরকার চাকরি দেয়ার পরিবর্তে যুবকদের কাছ থেকে চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। ফলে যুব সমাজের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপির অন্দরে। গত আট বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কয়েক লাখ খালি পদ পড়ে থাকলেও, নিয়োগ কার্যত বন্ধ। তারই মধ্যে সামরিক বাহিনীতে স্থায়ী চাকরি কার্যত বন্ধ করে দেয়ার ওই সিদ্ধান্ত দলের গ্রামীণ ভোটব্যাংকে বড় মাপের ধস নামাতে পারে বলেই আশঙ্কা দলীয় নেতাদের। কারণ, সামরিক বাহিনীতে জওয়ান পদে যোগদানকারীদের বড় অংশ আসে গ্রামীণ ভারত থেকে।

সামগ্রিক পরিস্থিতি যখন এই রকম, তখন প্রধানমন্ত্রীর পরোক্ষ-আশ্বাসে তেমন আস্থা রাখতে পারছেন না তার দলের অনেক নেতাই। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘মূল সমস্যা হলো চার বছরের চাকরি শেষে অবসর নিতে হবে অগ্নিবীরদের। এটাই মেনে নিতে পারছে না যুব সমাজ। ওই নিয়ম না পাল্টালে বিক্ষোভ থামানো কঠিন। অন্য দিকে, অগ্নিবীর প্রকল্পের যাবতীয় ভিত্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে অবসর গ্রহণের উপরে। কারণ তবেই সরকারের পেনশন খাতে খরচ বাঁচানো সম্ভব হবে। তাই সমাধানসূত্র পেতে প্রকল্পের খোলনলচে বদলের প্রয়োজন।’

আর তা করলে ফের সমালোচনার ঝড় উঠবে। বিরোধীরা বলবেন, নোটবাতিল, জিএসটি-র মতো অগ্নিপথ প্রকল্পও যথেষ্ট বিচার-বিবেচনা না করে তড়িঘড়ি রূপায়ণের চেষ্টা হয়েছে। তাতে মুখ পুড়বে সরকারেরই।

আন্দোলনকারীদের মূল দাবি, সামরিক বাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে পুরনো নিয়মে নিয়োগ। অগ্নিবীরেরা অবসরের পরে বিজেপি অফিসে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলে পরিস্থিতি আরো ঘোরালো করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বিরোধীদের মতে, আসল সত্যটা বলে দিয়েছেন বিজয়বর্গীয়। অগ্নিবীরদের পুনর্বাসনের যে প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন মহল থেকে দেয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ওই বিজেপি নেতার মন্তব্য। যাতে বিড়ম্বনায় গোটা পদ্ম শিবির।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

দেখুন:

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com