বুধবার, ০৪:০০ অপরাহ্ন, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

তৃতীয় পক্ষ বিষিয়ে তোলে সালমান-সামিরার জীবন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১১ বার পঠিত

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ ও সামিরার দাম্পত্য জীবনে অবিশ্বাস এবং সন্দেহের বীজ বপন করে তৃতীয় পক্ষ। তারাই নানা তথ্য ছড়িয়ে সালমান-সামিরার জীবনকে বিষিয়ে তোলে, যার পরিণতিতে তাঁদের দাম্পত্য জীবনে বড় ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তাঁদের সম্পর্কের এই ফাটল মেরামতে এগিয়ে আসেননি।

একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সালমান শাহর মৃত্যুর পেছনে তৃতীয় পক্ষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাত ছিল। কিন্তু কারা ছিল সেই তৃতীয়পক্ষ? এ ক্ষেত্রে কার কী স্বার্থ ছিল? প্রয়াত নায়কের মৃত্যুর ২৯ বছর পর সেই প্রশ্নগুলো আবার সামনে এসেছে। সালমান শাহ হত্যা মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন। পাশাপাশি মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের মৃত্যুর পর পুলিশি তদন্ত হয়েছিল শুধু আত্মহত্যার বিষয়টি সামনে রেখে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে গত ২১ অক্টোবর ১১ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নানামুখী তথ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আতিকুল আলম খন্দকার গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সালমান শাহর মৃত্যু রহস্য বের করতে তদন্তকাজ অব্যাহত আছে। তদন্তের প্রয়োজনে যাকে যাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সালমান-সামিরার দাম্পত্য জীবন বিষিয়ে তোলা তৃতীয় পক্ষের তালিকায় অনেকের নাম এসেছে। তবে কয়েকজন ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। এই তালিকায় আশরাফুল হক ডন, চিত্রনায়িকা শাবনূর এবং ব্যবসায়ী ও সিনে প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছিলেন অন্যতম। এরই অংশ হিসেবে হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় শাবনূর-সালমানের বিয়ে হয়ে গেছে। তৎকালীন সিনেপত্রিকা সাপ্তাহিক চিত্রালীতে এমন খবর প্রকাশিত হয়। সালমান-শাবনূরের বিয়ের গুজব হঠাৎ কেন ছড়ালÑ তখন বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখেনি কেউ। কিন্তু বিয়ের গুজব এবং ঘনিষ্ঠ মেলামেশা, শুটিংয়ে আহত হয়ে ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন সালমানের শয্যাপাশে গভীর রাতে শাবনূরের বার বার উপস্থিতি, চিকিৎসার নামে কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুরে শাবনূরের কাছে সালমানের যাওয়া এবং সেখানে একসঙ্গে ছবি তোলার ঘটনা সালমান-সামিরার দাম্পত্য সম্পর্কে বড় ফাটল তৈরি করে।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একসঙ্গে একাধিক সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে একসময় সালমানের প্রেমে পড়ে যান শাবনূর। ওই সময় শাবনূর নিজেও তাঁদের দুজনার মেলামেশার নানা তথ্য সামিরার কানে তুলে দিতেন, যাতে সালমান-সামিরার দূরত্ব বাড়ে। আবার ডনও শুটিংয়ের বাইরে শাবনূর-সালমানের ঘনিষ্ঠতার তথ্য তুলে দিতেন সামিরার কানে। সেই সুবাদে সামিরার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন ডন। এক পর্যায়ে ডন সামিরার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন বলে ওই সময় খবর চাউর হয়েছিল।

জানা গেছে, সামিরার হস্তক্ষেপেই সালমান শাহ একসময় চিত্রনায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে নতুন ছবি করা বাদ দেন। সালমান কখন কোথায় যাচ্ছেন, কোন নায়িকার সঙ্গে রসিকতা করছেন, রোমান্টিক দৃশ্যের সুযোগে ক’বার শাবনূরকে বুকে টেনেছেন, শুটিং থেকে কখন বের হলেন, তারপর শাবনূরকে নিয়ে কোথায় গেলেনÑ এসব তথ্য সামিরার কানে তুলে দিতেন কেউ কেউ। যে কারণে সালমান বাসায় ফেরার পর সামিরার জেরার মুখে পড়তেন। সালমানের বক্তব্যে কোনো গরমিল পাওয়া গেলেই শুরু হতো কলহ। একপর্যায়ে শাবনূরকে কেন্দ্র করে তাঁদের কলহ চরমে ওঠে। টানা তিন মাস চট্টগ্রামে অবস্থান করেন সামিরা। স্ত্রী এভাবে চলে যাওয়ার পর সালমান আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। এ সময়টাতে শাবনূর সালমানের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এই খবরও সামিরার কানে পৌঁছার পর তাঁদের দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায়।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরামর্শে সালমান-শাবনূরের ঘনিষ্ট আলাপচারিতার অডিও গোপনে ক্যাসেটবন্দি করা হয়। পরে তা সামিরাকে শোনানো হয়। সালমানকে না জানিয়ে দুজনার আলাপচারিতার রেকর্ডের বিষয়টি শাবনূরও জানতেন। এমনকী শাবনূর-সালমান কোথাও একান্তে সময় কাটালে কিংবা কথা বললেও বিষয়টি সামিরা জেনে যেতেন। এর জন্য তখন শাবনূরকে সন্দেহ করা হতো।

১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘শেষ ঠিকানা’ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে গিয়ে সালমান আহত হন। তাৎক্ষণিক তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। ঘটনার আধাঘণ্টা পর তাঁকে ধানমন্ডির নাজ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। শাবনূর মাঝেমধ্যে সালমানকে দেখতে যেতেন। সেই খবর সামিরা জেনে যেতেন। আবার ওই বছরের আগস্ট মাসেই চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান শাবনূর। আর সালমান যান কলকাতায়। পরে সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুর যান। সালমানের লক্ষ্য ছিল গোপনে রেকর্ড করা ক্যাসেট উদ্ধার করা। কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সালমান শাহ মনে প্রাণে সামিরাকেই ভালোবাসতেন। তবে সামিরার সন্দেহ ছিল সালমান শাবনূরকে ভালোবাসে।

সালমানের মৃত্যুরহস্য বের করতে এসব বিষয়ে সামিরা এবং শাবনূরের সঙ্গে কথা বলতে চান তদন্তকারীরা। এ ছাড়া ডনের সঙ্গেও কথা বলবেন তাঁরা। সামিরা ও ডন বর্তমানে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এর মধ্যে ডন আত্মসমর্পণের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আর শাবনূর রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।

গতকাল সোমবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে শাবনূর বলেছেনÑ দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি, কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে সালমান শাহ হত্যা মামলার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। আমার সম্পর্কে ভিত্তিহীন গুজব ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সবাইকে অনুরোধ করছি সত্যতা বিবর্জিত ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন। সালমান শাহ ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় সহ-অভিনেতা। আমরা একসঙ্গে প্রায় ১৪টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সালমান ছিল জনপ্রিয়, অসাধারণ শক্তিমান এবং প্রতিভাবান অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করে আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার বিকশিত ও উজ্জ্বল হয়েছে।

শাবনূর আরও বলেন, সালমান শাহর অকাল মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে গভীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। আমাদের জুটির সাফল্য একসময় অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ কেউ হয়তোবা নিজেদের বাঁচাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকতে পারে। আমাদের নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে, যা আমাকে মানসিকভাবে ভীষণভাবে আঘাত করেছে। আজও আমি স্পষ্ট বলতে চাইÑ সালমান শাহ কীভাবে মারা গেছে, তা আমি সত্যিই জানি না। আমি তাঁর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। যেই দোষী হোক না কেন, তাকে যেন আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়Ñ এটাই আমার একান্ত দাবি ও প্রত্যাশা।

অন্যদিকে দুয়েক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ডন। তিনি বলেন, সবাই বলছে আমি নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ৩০ বছর পালাইনি, এখন পালাব কেন? আমি বাসাতেই আছি। ভাবছি, দুয়েক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করব। কারণ, ৩০ বছর ধরে যন্ত্রণা ভোগ করছি। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।

এদিকে , ?সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামি তাঁর সাবেক স্ত্রী সামীরা হক এবং খলনায়ক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ?গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার ইন্সপেক্টর আতিকুল ইসলাম খন্দকার তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। ?মামলার অপর আসামিরা হলেনÑ সামিরা হকের মা লতিফা হক লুছি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডেবিট, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আ. ছাত্তার, সাজু, রেজভি আহমেদ ওরফে ফরহাদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com