বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘জনগণ বহু বছর পর স্বাধীনভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছে। তাই এবার জনগণই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। জনগণই ভোট পাহারা দেবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে, মুখ্য হবে ভোটারদের ভূমিকা।’
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশ ও প্রথম আলো।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও জনগণই প্রধান অংশীজন। নির্বাচন কমিশন শুধু নির্বাচন পরিচালনা করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনশৃঙ্খলা দেখে এবং সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্ব থাকে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে লক্ষ্যে বিএনপি যাবতীয় ভূমিকা রাখবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘বিএনপির অঙ্গীকার ছিল ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে পারলে এরপর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দলগুলো নির্বাচনে জয়ী হলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। এসব দফায় অনেকগুলো কমিশন গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। সেসব কমিশনের অনেকগুলো অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে। তবে সংস্কার কমিশনগুলোর মাধ্যমে যেসব বিষয় বেরিয়ে এসেছে, সেগুলো যথেষ্ট নয়। সে জন্য বিএনপি দায়িত্ব পেলে ৩১ দফায় কমিশন গঠনের বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো পুনরায় গঠন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনসহ বহু কমিশন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনগুলোর মধ্য দিয়ে যেসব সংস্কার প্রস্তাব আসবে, সেগুলো আগেই পাওয়া গেছে বলে ধরে নেওয়া হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এরপরও অনেক বেশি সংস্কার করতে হবে। তখন সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করলে সেখানে সারা জাতির জন্য সেটা উন্মুক্ত থাকবে। সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব আহ্বান করা হবে। এখানে কোনো প্রস্তাব যদি জনগণের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় যেটা রাষ্ট্রের জন্য, সমাজের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন, সেগুলো গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে দেশের নয়টি জেলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের প্রাপ্ত সুপারিশ আজকের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশ উইমেন রাইটস লিড মরিয়ম নেছা। সভা পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ।