চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টরসহ ৬০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির যানবাহন।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় দারোয়ান কর্তৃক এক ছাত্রীর গাঁয়ে হাত তোলাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ শুরু হয় এবং রাত ৩টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আজ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তার ফ্ল্যাট বাসায় প্রবেশ করতে যান। এ সময় দারোয়ানকে গেট খুলতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান। দীর্ঘক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচির পর একপর্যায়ে গেট খোলা হয়। তবে ভেতরে ঢোকার সময় দারোয়ান ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুই এত লেট করে কেন ঢুকলি?’ এ সময় দারোয়ানের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে ধাক্কা ও গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠে।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের বিষয়টি জানান। তারা দারোয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ সময় খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় স্থানীয়দের দেশীয় অস্ত্র হাতে দুই নং গেটে মহড়া দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ৩০ জনের বেশি চবির মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে দায়ের কোপেও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছেন। তাদেরও অনেকে আহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ আসলে পুলিশের গাড়ি, নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি এবং প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এরপর রাত ৩টার দিকে সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
চবির মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার মো. টিপু সুলতান বলেন, ‘একই দিনে এত শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় আমি আগে কখনও দেখিনি। আমি নিজেই প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছি। আর গুরুতর আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে।’
দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর মেজর মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছি, আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার বলেন, ‘আমাদের দুইজন সহকারী প্রক্টর, নিরাপত্তাকর্মী এবং অর্ধ শতাধিকের মতো শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারপর সেনাবাহিনী আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সমস্যা এখনও পুরোপুরি সমাধান হয়নি। আজ রবিবার সকল ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। দোষী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’