আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্থিসন্ধি হলো হাঁটু, যা শুধু শরীরের ওজনই বহন করে না; স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে, দৌড়াতে, এমনকি আমাদের বসতেও সাহায্য করে। নাবালক থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী ব্যক্তির হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। হাঁটুব্যথা কোনোভাবেই অবহেলার বিষয় নয়। এর সঠিক চিকিৎসার অভাবে চলাফেরায় দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
হাঁটুব্যথার কারণ : বয়সজনিত হাঁটুর হাড়, তরুনাস্থিসহ গাঠনিক নানা পরিবর্তন, বাতব্যথা, আঘাতজনিত হাঁটুর পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ করে টান বা চাপ খেলে বা লিগামেন্ট ছিড়ে গেলে অথবা আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্যথা হতে পারে। জীবাণুর সংক্রমণজনিত কারণ ছাড়াও ক্রিস্টাল বা স্ফটিক জাতীয় পদার্থের অস্বাভাবিক উপস্থিতি ও তার প্রভাব, কোমর সমস্যাজনিত ব্যথা হাঁটুতে ছড়িয়ে পড়লে, সঠিক দেহভঙ্গির অভাবে হাঁটুর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে ব্যথা হতে পারে। অন্যান্য রোগ, যেমন টিউবারকিউলোসিস, হিমোফিলিয়া, ক্যানসার ইত্যাদি কারণেও হাঁটুব্যথা হতে পারে।
উপসর্গ : হাঁটুব্যথা, হাঁটু ফুলে থাকা, ভাঁজ করতে কষ্ট হওয়া, বসা থেকে দাঁড়ানো ও দাঁড়ানো থেকে বসতে কষ্ট হওয়া, হাঁটু পুরোপুরি সোজা করতে অক্ষম ইত্যাদি।
যাদের জন্য ঝুঁকি : যারা ব্যাপক হাঁটু ব্যবহার করেন, পঞ্চাশোর্ধ প্রায় সবাই (তবে ঝুঁকিতে নারীরা বেশি), শারীরিক স্থূলতা, দীর্ঘ দূরত্বে দৌড়ানো, কম শারীরিক নড়াচড়া, সাধারণ তাপমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ঠান্ডায় কাজ করেন যারা।
মুক্তির উপায় : হাঁটুব্যথার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজন। এজন্য ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। তবে পুনর্বাসন চিকিৎসা এক্ষেত্রে খুব কার্যকর। ফিজিক্যাল এজেন্টের ব্যবহার এবং সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করে ভালো থাকা যায়। কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসাও দেওয়া হয়। মারাত্মক কিছু ক্ষেত্রে হাঁটু রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজনে চলাফেরায় হাঁটুতে বাহ্যিক চিকিৎসা সেবা হিসেবে হাঁটুবন্ধনী ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয় : চলাফেরার সময় যথাসম্ভব সমতল রাস্তা ব্যবহার করুন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করা যাবে না। যদি করতেই হয়, তা হলে টুলে এক পা রেখে সেটিকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিন। সুযোগে একটু চেয়ারে বসুন। মাঝে মাঝে সাময়িক সময়ের জন্য হাঁটাচলা করা যেতে পারে। বহুতল ভবনে উপর-নিচে ওঠানামার সময় লিফট ব্যবহার করুন, কিংবা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ভালো পা (ব্যথাবিহীন হাঁটু), নামার সময় অন্য পা আগে ব্যবহার করুন। একনাগাড়ে দীর্ঘ উচ্চতায় সিঁড়িতে না উঠে মাঝে একটু বিরতি নিন। তবে অযথা সিঁড়ি ব্যবহার করবেন না। উঁচু হিলের জুতা পরিহার করুন। সতর্কতার সঙ্গে হাঁটাচলা করুন। প্রয়োজনে ওয়াকিং এইড ব্যবহার করুন। ভারী কাজে সতর্কতা অবলম্বন করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোয় থাকুন। ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই, কোলাজেন ও নানা খনিজ লবণসমৃদ্ধ খাবার খাবেন। ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। উঁচু কমোড বা পায়খানা ব্যবহার করবেন। তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।