সোমবার, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

সংস্কারে একমত সব দল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫
  • ৯ বার পঠিত

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সঙ্গে গতকাল শনিবার বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এ বৈঠকে প্রতিটি দলই সংস্কারের বিষয়ে তাদের ঐকমত্যের বার্তা তুলে ধরেন। অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পৃথিবীতে একটা অনন্য নজির স্থাপন করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

দুপুর একটায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ বৈঠক শুরু হয়। জানা গেছে, প্রত্যেকটি দলের জন্য ২ মিনিট সময় বরাদ্দ ছিল। এ সময় তারা তাদের প্রত্যাশার কথা বলেন এবং নানা বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আরও উপস্থিত ছিলেনÑ তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রমুখ।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল আয়োজন করা হয়েছিল। এতে কমিশনপ্রধানরা ছিলেন। মূলত, এখানে সংস্কারের যেসব বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে, সেসব বিষয় সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এতদিন যে কথা বলে এসেছি, তাকেও (জাতিসংঘের মহাসচিবকে) একই কথা বলেছি। সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সেই সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়। আমরা বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যেসব বিষয় আছে, সেগুলো করে ফেলা, দ্রুত নির্বাচন করা এবং একটি পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো করতে হবে। এটা (সংস্কার) চলমান প্রক্রিয়া। সেই বিষয়গুলো বলে এসেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব কিছু বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি কোনো কমেন্ট (মন্তব্য) করেননি।

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা যা চাচ্ছে, সব তাদের দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠক হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিবকে টাইম ফ্রেম দিতে যাব কেন?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আপনারা বসে রিফর্মস কী নেবেন, সেটা ঠিক করেন। উনি বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামী নির্বাচন, এমনটা উনি আশা করছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি। টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী।

জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ই তৈরি করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দল মিলে একটি ঐকমত্য পোষণ করতে হবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে। জনগণের কাছে আমাদের সংস্কারের যে কমিটমেন্ট, যে ধারাবাহিকতা, সেটা বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদের দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছি। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্র যে একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেটাই আলোকপাত করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের স্ব স্ব সংস্কার রিপোর্টের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছিলেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংস্কার বিষয়ে তাদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন।

এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে আমাদের সংস্কার বিষয়ে যে অবস্থান, আমরা মনে করি, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় যে সরকার গঠিত হয়েছে, বিচার ও সংস্কার অন্যতম কমিটমেন্ট জনগণের কাছে।

সংবিধান সংস্কার নিয়ে এনসিপির অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান, গণপরিষদের মাধ্যমেই সংস্কার করতে হবে, অন্যথায় সংসদের সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেও এটাই দেখতে পাই। তিনি বলেন, আমরা আমাদের এই দলীয় অবস্থান সংক্ষেপে বলেছি। জাতিসংঘ মহাসচিবও তার অবস্থান থেকে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন নিজেরাই সমঝোতায় আসে; একটা ঐকমত্যে আসে।

বৈঠকের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মুঠোফোনে কথা বলেন দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে। তার ভাষ্য, খুব বেশি কথা বলার সুযোগ ছিল না। আমি যেটা বলেছি তা হলো, একটা অভ্যুত্থান হয়েছে। এখন আমাদের গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের সময়। এ জন্য প্রয়োজন যথাসময়ে নির্বাচন এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। এসবের জন্য আমরা জাতিসংঘের মহাসচিবের সহযোগিতা চেয়েছি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সংস্কারের বিষয়ে জাতিসংঘের যে সমর্থন, তা অল্প সময়ের জন্য নয়, দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে কি কথা হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, জাতিংসংঘ মহাসচিবকে তিনি বলেছেন, সংস্কার খুবই দরকার, কারণ গত তিনটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংস্কার দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রথমত নির্বাচন ও প্রশাসনের সংস্কার দরকার। এরপর একটি গণতান্ত্রিক সরকার আসার পর সংস্কার অব্যাহত থাকতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আরও ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি জাতিসংঘ মহাসচিবকে। বলেছি, গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘও ভূমিকা নিয়েছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ও স্বচ্ছতার সঙ্গে চাই। সে জন্য জাতিসংঘ আমাদের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব?্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফরকে স্বাগত জানিয়ে ইনসাফ ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সহায়তা আহ্বান করেছেন। তিনি বলেছেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে যে রাষ্ট্রীয় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তা মানবাধিকার দপ্তরের ১১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিস্তারিত ফুটে উঠেছে। তিনি জানান, এবি পার্টি মনে করে, বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে সর্বপ্রথম জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় শেখ হাসিনা পরিবারের যে সকল আত্মীয় রাষ্ট্রীয় স্বজনপ্রীতির মাধ?্যমে চাকরি পেয়েছেন এবং এর অপব?্যবহার করেছেন দেশের জনগনের বিপক্ষে, সেগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেনÑ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআরের আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপির আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচওর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএসের আবাসিক প্রতিনিধি সুধির মুরলিধরন, আইওএমের মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ, ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com