ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও জামায়াতের একক প্রার্থী পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মাঠের ভোট ও রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিনের সাবেক মিত্র বিএনপি ও জামায়াত তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে তৎপর রয়েছে। এ আসনে জয়ের ব্যাপারে দুই দলকেই কৌশলী হতে হবে। দলীয় ভোটের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজে যে প্রার্থী সর্বস্তরের ভোটারের কাছে পৌঁছাতে পারবেন তিনিই এগিয়ে যাবেন।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুস সামাদ বিশ্বাস, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মোক্তার আলী। এ আসনে অন্য রাজনৈতিক দলের তৎপরতা থাকলেও এখনো সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম শোনা যায়নি।
কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনটি গঠিত। বর্তমানে এ আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৭ হাজার ৯২৪ জন। একাধিকবার সীমানা পরিবর্তন হওয়ায় বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনের ফলাফলেও এর প্রভাব রয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭৩ সালে এই আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য। ১৯৭৯ সালে শুধু কেশবপুরকে নিয়ে সংসদীয় আসন যশোর-৬ গঠিত হলে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হন গাজী এরশাদ আলী। ১৯৮৬ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল হালিম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে চাকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের। এরপর ১৯৯১ সালে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দল বদল করে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন পুনরায় বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জুনে সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এএসএইচকে সাদেক। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে ফের সীমানা পরিবর্তন হলে (কেশবপুর, অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন) সংসদীয় আসন-৬ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন অভয়নগরের অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পূর্বের সীমানায় (শুধু কেশবপুর উপজেলা) নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দুবার নির্বাচিত হন প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের স্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০২০ সালে উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী খন্দকার আজিজুল ইসলাম বিজয়ী হন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বদলে গেছে ভোটের মাঠের সমীকরণ। নয়াসমীকরণে আলোচিত হচ্ছে আগামী নির্বাচনে মুখোমুখি হবে দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা। উভয় দল নিজ নিজ ভোট ব্যাংকের বাইরে সাধারণ ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। সেই হিসাবে দলের পাশাপাশি প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজও ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করবে। ফলে প্রার্থী মনোনয়নে দূরদর্শিতার ওপর জয়-পরাজয় নির্ভর করবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছেন। সেজন্য মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে। ১৬ বছর বিএনপির অফিস তালাবদ্ধ ছিল। নেতাকর্মীরা গায়েবি মামলার আসামি। তাদের মনোবল চাঙা করার চেষ্টা করছি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। তার বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকেছি। কেশবপুরের সর্বস্তরের মানুষ আমাকে পছন্দ করে।
এদিকে জামায়াতের কেশবপুর উপজেলা আমির অধ্যাপক মোক্তার আলী একক প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রকাশ্যে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোটের প্রস্তুতি হিসাবে নানা কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। জামায়াত এ আসনটি তাদের দখলে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অধ্যাপক মোক্তার আলী বলেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দৃঢ়। প্রতিটি গ্রামে মহিলা কর্মীসহ দলের কর্মীরা মানুষের কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। যারা হিংসা-হানাহানি করছে জনগণ তাদের বর্জন করবে।