বুধবার, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

‘জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে’ গণভোট করার সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যে দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তরের পর এক ব্রিফিংয়ে সুপারিশের কিছু বিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার পর এবং জাতীয় সংসদে সাধারণ নির্বাচনর আগে সরকার যেন গণভোট অনুষ্ঠান করে, আমরা এটা লিখিতভাবে বলেছি। এর বাইরে আমরা সরকারকে আজ বলেছি, অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে আলাপ আলোচনা করে একটি তফসিল, (গণভোট) নির্বাচনের তফসিল তৈরি করে ফেলে।’

ফরেন সার্ভিস একাডেমিকে এই ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনও আছে। এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠান সকলেই মনে করেছে সবার অংশগ্রহণের জন্য এটা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যকীয়। সে বিবেচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোটের প্রস্তাব বা সুপারিশ করেছে।’

তবে ওই আদেশ জারির পর কোন দিন গণভোট হবে, সে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সরকারকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বলেছি।’

কমিশনে সহ সভাপতির ভাষায়, সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তনের জন্য ‘জনগণের ক্ষমতা’ যেন ব্যবহৃত হয়, সেই প্রস্তাব করেছেন তারা।

রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তার আগে আরেকটি নির্বাচন করতে গেলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়।

সংস্কার উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে জুলাই সনদে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা থাকায় আলাদাভাবে আলোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। সেই সুপারিশমালা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন।

জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করে আসছিল।

শেষ পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হলেও সেই গণভোট কবে, কীভাবে হবে তা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা ছিল।

জামায়াতসহ কয়েকটি দল ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরেই গণভোট চায়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতেও তারা আন্দোলন করছে।

অন্যদিকে এ দুই বিষয়ে প্রবল আপত্তি আছে বিএনপির। নভেম্বরে গণভোটের দাবির মধ্যে ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান’ আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপি নেতারা।

গণভোট কীভাবে হবে সেই বিবরণ দিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সরকার একটি আদেশ করবেন। সেই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করেও জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। যখন বিল হিসেবে উপস্থাপিত হবে এবং গণভোটের মধ্য দিয়ে জনগণের সম্মতি লাভ করা যায়, তাহলে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহযোগিতা করবে।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের জন্য যে পরিষদ তৈরি হবে, সেই পরিষদ জুলাই জাতীয় সনদের স্পিরিটকে ধারণ করে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন পরিবর্জন পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে এই বিল যেহেতু জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হয়, তাহলে এটা তাদের সাহায্য করবে।’ সংবিধান সংশোধনের যে বিষয়গুলোতে জনগণ গণভোটের মাধ্যমে সম্মতি দেবে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ যদি ২৭০ দিনের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে না পারে, তাহলে গণভোটে পাস হওয়া বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে।

২৭০ দিন দায়িত্ব পালনের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার কার্যক্রম সমাপ্ত করবে। জাতীয় সংসদের সদস্যরাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি, জাতীয় সংসদের সদস্যরা একাদিক্রমে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আলাদাভাবে শপথ গ্রহণ করবেন। সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার নিজস্ব রুলস অফ প্রসিডিউর তৈরি করবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদের যিনি স্পিকার হবেন, তিনি সংবিধান পরিষদের সভাপতিত্ব করবেন। তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার ওই পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাদের উভয়ের অনুপস্থিতিতে সংস্কার পরিষদে গঠিত সভাপতি প্যানেল থেকে সভাপতিত্ব করবেন।’

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন এবং কোনো অবস্থাতেই এমন পরিস্থিতির সূচনা হবে না যে সরকারের দেওয়া বিলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমরা এটা আস্থা রাখতে চাই।’

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com