বাংলাদেশে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গমের প্রথম চালান আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) দেশে পৌঁছাবে। পানামার পতাকাবাহী ‘এমভি নর্স স্ট্রাইড’ নামের জাহাজটি দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ভিড়বে। জাহাজটিতে ৫৭ হাজার মেট্রিক টন গম রয়েছে, যা সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত গমের নমুনা সংগ্রহ ও খালাস প্রক্রিয়া মনিটরিং করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের টিম চট্টগ্রামে এসেছে। টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) এএইচএম কামরুজ্জামান। আজ জাহাজ থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করে আসছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রেক্ষাপটে দেশটি থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে এ গম কেনা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি টন গমের মূল্য ধরা হয়েছে ৩০২ মার্কিন ডলার। মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাব গত ২৩ জুলাই ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন করে। তবে চুক্তিতে ১০ শতাংশ কমবেশির শর্ত থাকায় মোট ২ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন গম আসবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানিকারক সমিতির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। এ অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭ লাখ টন গম আমদানি করবে। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিতে প্রতি টনে ২৫ থেকে ৩০ ডলার বেশি খরচ হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে ৮০ লাখ টনের বেশি গমের চাহিদা রয়েছে। দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১১ লাখ টন গম। বাকিটা আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ তার মোট গম আমদানির অর্ধেকের বেশি রাশিয়া থেকে নিয়ে থাকে। গত অর্থবছরে রাশিয়া থেকে ৫৪ শতাংশ গম আনা হয়। এরপরই রয়েছে ইউক্রেন, যেখান থেকে ১৪ শতাংশ গম আমদানি করা হয়।
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ অতিরিক্ত সচিব এএইচএম কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জাহাজ থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। নমুনা ‘খাওয়ার উপযোগী’ বলে প্রতিবেদন এলে খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতিমধ্যে কাস্টমসের কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক মো. সাকিব রেজওয়ান জানান, আমদানিকৃত গমের ৩৪ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চট্টগ্রাম সাইলোতে মজুত করা হবে। বাকি গম মোংলা সাইলোতে রাখা হবে।