রবিবার, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

৯ মাসে জব্দ ১১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫ বার পঠিত

দুর্নীতির লাগাম টানতে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও জব্দ করেছে সংস্থাটি। এসব সম্পদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। আদালতের নির্দেশে একাধিক ধাপে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগে গত ৯ মাসে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও জব্দ করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্রোক করা স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ৪৩২টি গাড়ি, ৭৩টি বাড়ি, ১১২৭টি ফ্ল্যাট, ৪৪টি প্লট ছাড়াও বহু দোকান এবং ৪ হাজার ৯০৫ একর জমি রয়েছে। এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অপরদিকে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা টাকা, সঞ্চয়পত্র, কোম্পানির শেয়ার, স্বর্ণালঙ্কার মিলে ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, আদালতের নির্দেশে রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে ক্রোক এবং জব্দ হওয়া এসব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রিসিভারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এসব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি সব আয়-ব্যয়ের হিসাব আদালতের মাধ্যমে জমা দেন। এ ছাড়া দুদকের নিজস্ব একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট রয়েছে। রিসিভারের পাশাপাশি এই ইউনিট থেকেও কর্মকর্তারা ক্রোক ও অবরুদ্ধ হওয়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে থাকেন।

দুদক থেকে জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৪২টি আদেশের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থাবর সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৫০০ একর জমি রয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ৩৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা মূল্যের ৩৯টি বাড়ি, ২২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ৫২টি ফ্ল্যাট, ১২ কোটি ৩১ লাখ টাকার ১০টি প্লট, ৮৮ লাখ টাকার ৫টি দোকান, ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ১৬টি গাড়ি, ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার ৪টি কমার্শিয়াল স্পেস রয়েছে। একই সময়ে বিদেশে ২৪ কোটি ৮ লাখ টাকা মূল্যের ২টি ফ্ল্যাট ক্রোক করা হয়। একই সময়ের মধ্যে মোট ১৬৬ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করার পাশাপাশি আদালত ৫৪টি আদেশে আরও ২ হাজার ৭১১ কোটি টাকার মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ এসেছে।

এদিকে এপ্রিলে কোনো সম্পদ ক্রোক ও জব্দের কোনো আদেশ আসেনি। তবে মে মাসে ১৫টি আদেশে ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মূল্যের ৩টি বাড়ি ক্রোক করা হয়। এ ছাড়া ৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ৭টি ভবন, ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার ২৫টি ফ্ল্যাট, ৩ কোটি ৩ লাখ টাকার ১২টি প্লট, ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকার ১৯৮টি গাড়ি এবং ৪০ লাখ টাকার ১টি দোকানসহ মোট ৪৩৯ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়। একই সময়ে ২৩টি আদেশে আরও ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়। জুন মাসে ১৫টি আদেশে ১১ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১০টি বাড়ি, ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের ২৫টি ফ্ল্যাট, ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা মূল্যের ১২টি প্লট, ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকার ১৯৮টি গাড়ি, ৪০ লাখ টাকার ১টি দোকান এবং ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ২৯০ একর জমি ক্রোক করাসহ মোট ১ হাজার ৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। একই সময়ে ২৩টি আদেশে আরও ২ হাজার ২০৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

অপরদিকে জুলাইয়ে ২৫টি আদেশে বিভিন্ন সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা মূল্যের ৬টি ভবন, প্রায় ২০ কোটি টাকার ১৫টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ৬টি প্লট, ৬৮৮ কোটি টাকার প্রায় ২ হাজার একর জমি এবং ২ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গাড়িসহ মোট ৭৪৬ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। একই সময়ে ৩০টি আদেশে দেশে-বিদেশে আরও ৪৬৬ কোটি টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়।

আগস্টে ২২টি আদেশ হয়Ñ এর মধ্যে ৩৪ কোটি টাকা মূল্যের ১২টি বাড়ি, ৬ কোটি ২২ লাখ টাকার ১০টি ফ্ল্যাট, ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি প্লট, ১২ লাখ টাকার ১টি টিনের বাড়ি, ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ১৬টি গাড়ি এবং ৩১০ কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ১১৫ একর জমিসহ মোট ৩৬১ কোটি ২০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়। একই সময়ে ২৩টি আদেশে আরও ২১৭ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে ১০টি আদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মূল্যের ১টি বাড়ি এবং ৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা মূল্যের বিদেশে ২টি বাড়িসহ মোট ৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়। একই সময়ে ১৪টি আদেশে দেশে-বিদেশে ৮৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ আদালতের আদেশে জব্দ করেছে দুদক।

দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, আইন অনুযায়ী দুদক আদালতের আদেশে দুর্নীতিসংক্রান্ত সম্পদ ক্রোক কিংবা জব্দ করতে পারে। এসব সম্পদ দেখাশোনার জন্য আদালতই রিসিভার নিয়োগ করে দেন। সেভাবেই সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা হয়। আমরা এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কিনা, হস্তান্তর হয়ে যায় কিনা, ক্ষতি হয় কিনা, এসব বিষয় মনিটরিংয়ে দায়িত্বে আছি। তিনি আরও জানান, দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটে মাত্র চারজন জনবল দিয়ে চলছে। এখানে আরও লোকবলের প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া ক্রোকি সম্পত্তি যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা যাতে করা যায়, সে লক্ষ্যে একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। এটি কমিশন থেকে পাস হলে আরও সুচারুভাবে এসব কাজ সম্পাদন করা যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com