হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের মুক্তির প্রত্যাশায় তেল আবিবে বিশাল এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
সমাবেশে উদ্বোধনী ভাষণ দেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। তিনি বলেন, ‘বন্দীরা ঘরে ফিরছেন।’
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দীমুক্তির চুক্তি সম্পন্ন করতে ভূমিকা রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন তিনি।
আয়োজকেরা আশা প্রকাশ করছেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলনের এটিই হয়তো শেষ সমাবেশ, কারণ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী সোমবারের মধ্যেই সব বন্দী ফেরত আসার কথা রয়েছে।
সমাবেশে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে আয়োজক সংগঠন হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম, যদিও এই সংখ্যা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়নি।
উইটকফ নিজে অনুমান করেন, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১ লাখেরও বেশি। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এই রাতের স্বপ্ন দেখেছি। এটি এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য-এক হৃদস্পন্দনে একতাবদ্ধ মানুষ, শান্তি, ঐক্য ও আশার বার্তা নিয়ে আজ তেল আবিবের এই পবিত্র স্থানে, হোস্টেজেস স্কয়ারে, একত্রিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুধু চাইতাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ এখানে থাকুক।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যিনি ইসরায়েল ও হামাসের ওপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করে এই চুক্তি সম্ভব করেছেন। সোমবার সংক্ষিপ্ত সফরে ইসরায়েল পৌঁছাবেন তিনি।
এদিকে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দুই দিনে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে গেছেন-যে এলাকা এখন প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে মিসর নিশ্চিত করেছে যে সোমবার শারম এল-শেখে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যার লক্ষ্য হবে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চূড়ান্ত করা।
মিসরের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক মুখপাত্র জানান, ২০টিরও বেশি দেশের নেতা, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আছেন, এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মারও সোমবার মিসরে পৌঁছাবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার ইসরায়েল সফর শেষে মিসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। শনিবার তেল আবিবের সমাবেশে তার কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনারও বক্তব্য দেন।
বৃহস্পতিবার ঘোষিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দীমুক্তি চুক্তি অনুযায়ী, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৪৮ বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসামা হামদান ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি-কে বলেন, ‘স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বন্দী বিনিময় সোমবার সকাল থেকে শুরু হবে। এ বিষয়ে নতুন কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
তিনি আরও জানান, মাঠপর্যায়ের যোদ্ধারা এখনো নেতৃত্বকে হস্তান্তরের লজিস্টিকস সম্পর্কে কোনো বার্তা দেয়নি।
তেল আবিবে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আভিভ হাভরন, যার পরিবারের সদস্যরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত ও অপহৃত হয়েছিলেন, তিনি বলেন- ‘এই মুক্তি আমাদের কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা না ফিরলে আমরা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারব না। আমার বোন ও দুই ভগ্নিপতি নিহত হয়েছেন। আমার বড় বোন, তার মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ সাতজন আত্মীয়কে অপহরণ করা হয়েছিল। বেয়েরি সম্প্রদায়ের চারজন সদস্যের মৃতদেহ এখনো গাজায় রয়ে গেছে।’