শনিবার, ০৪:১৬ অপরাহ্ন, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নিজেদের অবস্থানে অনড় তিন দল

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১০ বার পঠিত

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যে যার অবস্থানেই অনড় আছে। গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দেওয়া মতামতে এনসিপি সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব করেছে। জামায়াতে ইসলামী দু-একদিনের মধ্যে মতামত জানাবে। তবে দলটি জানিয়েছে, তারা সাংবিধানিক আদেশ অথবা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাইবে।

গত বৃহস্পতিবার দেওয়া মতামতে বিএনপি জানিয়েছিল, যেসব সংস্কারের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সেগুলো আগামী সংসদে গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় গঠিত সরকার নতুন কোনো সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে তা বিপ্লব নয়– ক্যু হিসেবে গণ্য হবে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত সাতটি দল নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের পুরোটা বাস্তবায়ন এবং সনদের অধীনে ভোট চায়।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে জামায়াত বাদে সব দলের মতামত পাওয়া গেছে। জামায়াত মৌখিকভাবে অবস্থান জানিয়েছে। শনিবার (আজ) লিখিত মতামত জানাতে পারে। তিনি বলেন, এখন সব দলের মতামত সমন্বয় করা হচ্ছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রোববারের বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। এর পর বাস্তবায়ন পদ্ধতি সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে। সরকার নির্ধারণ করবে কোন পদ্ধতিতে সনদ বাস্তবায়ন করা হবে।

সনদের বাস্তবায়ন নিয়েও মতভিন্নতা
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগের বৈঠক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও তাদের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনের আগে সংবিধান সংস্কারে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের প্রস্তাব এসেছে। কমিশনের দুই দিনের সভায় আলোচনা হয়েছে, পিআর পদ্ধতিতে ১০০ আসনে উচ্চকক্ষ গঠনসহ কয়েকটি সংস্কারের জন্য গণভোট করা যায় কিনা। আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, এসব আলোচনা এখনও চিন্তাভাবনার পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নের কয়েকটি বিকল্প পথ দেওয়া হবে।

জুলাই সনদে সংস্কারের ৮৪ সুপারিশে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। ৭৩টিতে সব দলের ঐকমত্য হয়েছে। ১১ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টসহ (আপত্তি) ঐকমত্য হয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও তিন সাংবিধানিক কমিশনে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগসহ ৯ সিদ্ধান্তে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। দলটি জানিয়েছে, ক্ষমতায় যেতে পারলে তারা সংস্কারের এই ৯ সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে না। জামায়াতের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে চার সিদ্ধান্তে।

বিএনপি মতামতে জানিয়েছে, যেসব সংস্কার অধ্যাদেশ বা প্রশাসনিক আদেশ জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো নির্বাচনের আগে কার্যকরে আপত্তি নেই। সংবিধান সংশোধন করতে হবে না– এমন দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের কাজ অন্তর্বর্তী সরকার শুরু করে যেতে পারে। কিন্তু সংবিধান সংশোধন নির্বাচিত সংসদেই হতে হবে। জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকার করবে, যে দলই ক্ষমতায় যাক, ঐকমত্য হওয়া সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।

কমিশন আগেই জানিয়েছে, জুলাই সনদে সংস্কারের সিদ্ধান্ত ও আট দফা অঙ্গীকারনামা এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি পৃথকভাবে থাকবে।

দলগুলো সই করবে সিদ্ধান্ত ও অঙ্গীকারনামা অংশে। যদিও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা দূর হয়নি দফায় দফায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়।

আলী রীয়াজ বলেছেন, যেসব সংস্কার সংবিধান সংশোধন ছাড়া অধ্যাদেশ কিংবা নির্বাহী আদেশে করা যাবে, সেগুলোর তালিকা করা হয়েছে। সরকার চাইলে এগুলো নির্বাচনের আগেই কার্যকর করা সম্ভব। যেসব সংস্কার কার্যকরে সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সেগুলোর পৃথক তালিকা করা হচ্ছে। এগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে জন্য গণভোট ও সাংবিধানিক আদেশের আলোচনা করা হচ্ছে। তবে এত বেশি সংখ্যক সংস্কারের প্রস্তাব গণভোটে দেওয়া সম্ভব নয়।

জামায়াতের যে অবস্থান
বিএনপি গণভোটের বিরুদ্ধে। জামায়াত বলছে, গণভোটই সমাধান। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়ে মতামত জানাতে দলীয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ চলছে। শনি-রোববারের মধ্যে মতামত জানানো হবে। জামায়াতের মৌলিক অবস্থান হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নে পথ বের করা। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সনদ কার্যকর করা। তাতে ঐকমত্য না হলে জনগণের হাতে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া। তারাই গণভোটের ঠিক করবেন, কতটুকু সংস্কার হবে, কী কী সংস্কার হবে।

হামিদুর রহমান আযাদ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের আলোচনার বিষয়টি জামায়াতের লিখিত মতামতে থাকবে না। সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের প্রস্তাব করা হবে। এই দুটি কাজ কীভাবে করা যায়, তা আইন বিশেষজ্ঞরা ঠিক করছেন।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গণভোট সম্ভব নয়– এ বক্তব্যের বিষয়ে হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, “কমিশন বিএনপির প্রতি পক্ষপাত করে এ কথা বলছে। আর ৮৪টি প্রস্তাব তো গণভোটে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যে ১১টিতে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রশ্ন গণভোটে দেওয়া যেতে পারে। ব্যালটে ১২টি প্রশ্ন রাখা কঠিন কিছু নয়। জনগণ ঠিক করুক, তারা কোন কোন সংস্কার চান। অথবা পুরো সংস্কারকে একটি প্যাকেজ হিসেবে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট গ্রহণ করা যেতে পারে। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হওয়ায় গণভোট ফিরছে। ফলে সাংবিধানিকভাবেই গণভোট করা যায়।”

জামায়াত সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশের যে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে– এ বিষয়ে হামিদুর রহমান বলেছেন, ১৯৭৭ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ পদ্ধতিতে সংবিধান বদল করেছিলেন। পরে সংসদে অনুমোদন করা হয়। এবারও একই পদ্ধতিতে সনদ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সংবিধানের ৭(১) এবং ৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে গণ্য করে, সংবিধানে যে কোনো পরিবর্তনই বৈধ, তা ক্যু হিসেবে গণ্যের কারণ নেই। সংবিধানের কথা বললে বর্তমান সরকারও অবৈধ।

এনসিপি গণপরিষদে অনড়
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের গঠিত দল এনসিপি প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। গতকাল কমিশনকে দেওয়া মতামতে একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। দলটি বলেছে, ‘সনদ বাস্তবায়নের সর্বোত্তম ও গণতান্ত্রিক উপায় গণপরিষদ গঠন।’

তিনটি যুক্তি তুলে ধরে এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ জনগণের সর্বজনীন অভিমতের প্রতিফলন, তাই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গণপরিষদের মাধ্যমে হওয়া অপরিহার্য। গণপরিষদ সর্বস্তরের জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং প্রস্তাবিত সংস্কার ও সনদ বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক কাঠামো প্রদান করবে। পদ্ধতিটি গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনা সংরক্ষণ করবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের বিতর্ক বা বৈধতা-সংকট এড়াতে গণপরিষদ সহায়ক হবে।

পূর্ণাঙ্গ খসড়ার অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছিল, জুলাই সনদ সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পাবে। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বিরোধিতার পর কমিশন এতে বলদ এনেছে।
তবে জামায়াতের মতো এনসিপিও সনদকে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষপাতী। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন সমকালকে বলেছেন, সনদ অবস্থান নিয়ে এখনই বিতর্ক তোলা হচ্ছে। পুরোনো ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে সনদ আর কার্যকর করা হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। তাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে এর অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করে, সেখানে সাংবিধানিক সংস্কার হলে এর বৈধতা নিয়ে কখনও প্রশ্ন উঠবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com