আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম শুক্রবার (৮ আগস্ট) স্থিতিশীল থাকলেও সপ্তাহজুড়ে জুনের পর সবচেয়ে বড় পতন নথিভুক্ত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক উত্তেজনা ঘিরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উদ্বেগই এই পতনের মূল কারণ। খবর রয়টার্সের।
শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৬ সেন্ট বা দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ দশমিক ৫৯ ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম অপরিবর্তিত থেকে ৬৩ দশমিক ৮৮ ডলারে স্থির থাকে। তবে পুরো সপ্তাহে ব্রেন্টের দাম ৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৫ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।
দিনের শুরুর দিকে মার্কিন তেলের দাম ১ শতাংশের বেশি কমে যায় ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি চুক্তির পথে এগোচ্ছে, যা রাশিয়ার দখলে থাকা কিছু অঞ্চলকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। চলতি সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সুযোগ তৈরি করবে। তবে এর পাশাপাশি রাশিয়ান তেলের ক্রেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবিষয়ক বিরোধও বাড়ছে। এই সপ্তাহে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, ভারত রাশিয়ান তেল কিনতে থাকলে তাদের ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে। একই ধরনের পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন চীনের ক্ষেত্রেও।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার একাধিক দেশের আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতি ও তেলের চাহিদা নিয়ে নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে।
তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রক জোট ওপেক প্লাস রোববার ঘোষণা করেছে, সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক ৫ লাখ ৪৭ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রেও তেল খনন রিগের সংখ্যা বেড়ে ৪১১-এ পৌঁছেছে।
এফজিই নেক্সান্টইসিএর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ওপেক প্লাস সদস্যদের উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এবং ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর হওয়ায় বাজারে নেতিবাচক মনোভাব ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান স্টিফেন মিরানকে ফেডারেল রিজার্ভের শূন্য পদে মনোনীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে সুদের হার কমার প্রত্যাশা বেড়েছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তেলের চাহিদা বাড়াতে পারে।
ডলারের মান শুক্রবার কিছুটা বেড়েছে, তবে সপ্তাহজুড়ে তা নিম্নমুখী ছিল। ডলারের মান বৃদ্ধি পেলে বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ডলারে নির্ধারিত তেলের দাম বেড়ে যায়, ফলে চাহিদা কমে।
যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি ফিউচারস ট্রেডিং কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা তেলের ফিউচার ও অপশন বাজারে তাদের নেট লং পজিশন কমিয়েছে।