রবিবার, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বিমান দুর্ঘটনা: কিছু ক্ষোভ আর জিজ্ঞাসা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

‘পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ’ পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু। আর সেটা যদি হয় ছোট ছোট কোমলমতিদের লাশ, তাহলে তা বহন করা আরও দুঃসাধ্য। ছুটির পর যে স্কুল ক্যাম্পাস থাকত কোলাহলে মুখর, তা ভেসে গেল আর্তনাদে। স্কুল ছুটির পর জীবন থেকেও ছুটি নিল কোমলমতিরা। মুহূর্তেই তারা হয়ে গেল আকাশের তারা। বিষাদে ছেয়ে গেল আকাশ-বাতাস। এত শোক সহ্য করা বড়ই কঠিন।

দেশে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে, একের পর এক তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। কিছুদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশনের পর্দা থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে সরগরম থাকে এসব ইস্যুতে। প্রশাসন থেকে নেওয়া হয় নানান পদক্ষেপ, আবার সব চুপচাপ হয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, জনগণের মনে মৃত্যুর মিছিল কোথায় থামলে টনক নড়বে রাষ্ট্রের? দুর্ঘটনার ওপর মানুষের হাত নেই। তাই বলে এমন দুর্ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না, যাতে বিদ্যালয়ে পাঠ নিতে যাওয়া শিশুরা ফিরে এলো লাশ হয়ে। একটি দুর্ঘটনায় এত বেশি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা বিরল। এ ঘটনায় শুধু স্বজনহারা পরিবার নয়, পুরো বাংলাদেশ শোকাহত।

রাষ্ট্রসহ আমাদের সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। যাতে আর কোনো শিশু-কিশোর যেন আকালে ঝরে না যায়, সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রকে। মৃতের কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। যারা স্বজন হারিয়েছে, কোনো প্রতিদানই তাদের শোক ভোলাবে না। তবুও সরকারকে শিশু হারানো পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং ঝলসে যাওয়ারা যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন রাষ্ট্রকে তাদের পাশে থাকতে হবে। উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, সরকারকে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এটি কি নিছক কোনো দুর্ঘটনা, নাকি ষড়যন্ত্র। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনা শুধু ত্রুটির কারণে ঘটেছে বলে শিশু-কিশোরদের হত্যার সরকার দায় এড়াতে পারবে না। প্রশিক্ষণ বিমানের এ দুর্ঘটনা স্মরণকালের ইতিহাসের অন্যতম দুঃখজনক ও ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে—‘বসতিপূর্ণ এলাকায় এমন বিমান চলাচল বা প্রশিক্ষণের যৌক্তিকতা কি থাকতে পারে? এই দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো কি আদৌ পূরণযোগ্য?’ শাহাদাতবরণকারী ও আহত শিশু-কিশোরদের বাবা-মা ও পরিবারের পাশাপাশি আমরা সবাই শোকাহত, এই শোকে সান্ত্বনার কোনো ভাষা নেই। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। এই মুহূর্তে মৃত্যু ৩২ ছাড়িয়েছে। যারা বেঁচে থাকবে তারাও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে বলে চিকিৎসকরা আশা করতে পারছেন না। এই শিশুরা মরে গেল, ওদের মা-বাবার চোখের পানি কী দিয়ে পূরণ করবে এই রাষ্ট্র? যে মায়ের বুক খালি হয়েছে, সেই মা আজীবন এই কষ্ট বয়ে বেরোবে।

সরকারকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করে নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার সব ধরনের সহায়তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে এবং বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো বিমানগুলো বাতিল করে আধুনিক বিমান চালু করতে হবে।

এ ঘটনার দায় শুধু পাইলট বা প্রশিক্ষক প্রতিষ্ঠানের নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থার। সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন—কেউই দায় এড়াতে পারে না। কেন স্কুলের ছাদে বিমান পড়ল? নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোথায় ছিল? আগুন লাগার পর উদ্ধারকাজে কতটা প্রস্তুত ছিল ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী? আহতদের চিকিৎসায় কতটা সক্ষমতা দেখিয়েছে হাসপাতালগুলো? এসব প্রশ্নের উত্তর সরকারকে দিতে হবে। এ ঘটনা যেন আগুনে পুড়ে যাওয়া কিছু ভবনের মেরামতে আটকে না যায়। সন্তান হারানো মা-বাবার বুকফাটা আর্তনাদ কি রাষ্ট্র শুনবে? আজ যারা কাঁদছে, আগামীকাল তারা ন্যায়বিচারের জন্য পথে নামবে। এ শোক যদি প্রতিবাদে পরিণত হয়, তাহলে রাষ্ট্রকে তাদের জবাব দিতেই হবে। কারণ যারা হারিয়েছে তারা শুধু সন্তান নয়, নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়েছে। তাই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২১ জুলাই বাংলাদেশের জন্য এমন এক অবর্ণনীয় শোক নিয়ে এলো, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা শাখার দোতলা স্কুল ভবনে আছড়ে পড়া বিমান এখন পর্যন্ত কেড়ে নিল পাইলটসহ অনেক প্রাণ, যার প্রায় সবাই শিশু। আরও বহু শিশু হাসপাতালের বিছানায় পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে। অনেক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা আমরা দেখেছি। বিগত সরকারগুলোর নানা দমন-পীড়ন আমরা দেখেছি। আমাদের চোখের সামনে কত সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীকে হারিয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু এমন করে ছোট ছোট শিশুকে আকুতি নিয়ে চলে যেতে দেখিনি।

রাষ্ট্রকে তার জনগণের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে যা করণীয়, তাই করতে হবে; তা বাস্তবায়ন করার জন্য আর বসে থাকার মতো কোনো সময় কারও হাতে নেই।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com