রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনার মূল আসামির গ্রেপ্তার না করা ও এজাহার থেকে বাদ দেওয়া ‘রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না।
আজ শনিবার বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সরকার ‘পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয়’ রেখেছে যাতে দেশে ‘অরাজক পরিস্থিতি থাকে এবং এই অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়।’
ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে যুবদল সভাপতি বলেন, ‘এই ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট, ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যাদের দেখা গেছে আশ্বর্য্জনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতি আঘাতগুলো করেছে তারা অদ্যাবধি গ্রেপ্তারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয় ‘
বুধবার বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরনো তারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে। এ ঘটনায় বিএনপির তিন সংগঠনের পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তিনজন আসামি।
যুবদল নেতা মুন্না সংবাদমাধ্যমে আসা বাদীর মেয়ের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন। মেয়েটি বলেছেন, মামলার এজহারে খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত তিন খুনিকে ‘পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরাপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে’।
মুন্না বলেন, ‘ঘটনার ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, খুনের প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না… এটা একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।’
তিনি বলেন. ‘আপনাদের (সংবাদমাধ্যম) মাধ্যমে আমরাও জানতে চাই, কারা কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্য তিনজনকে আসামি করল, এটা আমরা জানতে চাই। আর ঘটনাটি বুধবারের। গতকাল শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা, কেন দুই দিন পর প্রচার হল, এর পেছনে কারা জড়িত সেটাও খুঁজে দেখা উচিত।’
এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান যুবদল সভাপতি।
ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড এবং তার পরের ঘটনাপ্রবাহের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। সেসব দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছে মানুষ, তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। এই ঘটনায় শুক্রবার পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে।
ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসে মোনায়েম মুন্না দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
মুন্না বলেন, ‘এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তার মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচজনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিস্কার করেছি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি।’
অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না উল্লেখ করে মুন্না বলেন, গত কয়েক মাসে সারাদেশের যেকোন জায়গা থেকে যখনই আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গত প্রায় এক বছরে আমরা আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি ‘
দায় এড়ানোর রাজনীতি করেন না দাবি করে যুবদল সভাপতি জানান, তারা বরং দায় গ্রহণ করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু হাজারো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা হলেও প্রশাসন কি তাদের বিষয়ে যথাযথ আইনি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে কেন নেয়নি প্রশাসনের কাছেও তাও জানতে চান মুন্না।
‘বিশেষ গোষ্ঠি নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্র করছে’ অভিযোগ করে যুবদল নেতা বলেন, ‘বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। কিন্তু একটি সুযোগসন্ধানী বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাছাই করা কিছু ঘটনার প্রতিবাদ করে। তারা বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং তীব্র কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিবৃতি দেয়া শুরু করেছে।’
বিএনপি ইতোমধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সরকার ও প্রশাসনকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসন ‘মারাত্মকভাবে ব্যর্থ’ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে যাতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে এবং এই অজুহাতে জাতির দীর্ঘ প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়।
একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণ চায় না, তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করে বিএনপি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছে ‘
মুন্না বলেন, ‘তারা (বিশেষ গোষ্ঠী) চায় দেশে আরও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। সরকারের একটি অংশ তাদের এই দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনার অংশ হয়ে অপরাধ দমনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আমরা বারবার অনুরোধ করার পরেও দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি ‘