রবিবার, ১১:২৭ অপরাহ্ন, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

নেতানিয়াহুকে বিশ্বাস করেন না অধিকাংশ ইসরাইলি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫
  • ৯ বার পঠিত

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বিশ্বাস করতে পারছেন না দেশের জনগণ। বিষয়টি বেশ আলোচিতও হচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর বিষয়টি সামনে আসে।

এর আগে গত মার্চে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এমন একটি যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন যেটি সুফল বয়ে আনছিল। তার এই সিদ্ধান্তকে ওই সময় ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। এটি ছিল গাজা যুদ্ধবিরতি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার আগেই তার দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয় এবং হামাসের বন্দিদশা থেকে কয়েক ডজন জিম্মি মুক্তি পায়, যার বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগার থেকে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দেওয়া হয়।

পরবর্তী পর্যায়ে আরও জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তির আগে গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করার কথা ছিল।

তিনি গাজাজুড়ে আবার আক্রমণ শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, হামাস ‌‌সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনকে একটি গৌণ বিষয় বলে মনে হয়েছিল তখন। গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যে প্রভাব পড়েছে তা বিবেচনাতেই নেওয়া হয়নি।

অনেক ইসরাইলি বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবারগুলো এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তিনি তাদের স্বজনদের (যারা জিম্মি আছে) নিরাপত্তা এবং জাতির বৃহত্তর কল্যাণের চেয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

জরিপে দেখা গেছে, বিবি হিসেবে পরিচিত নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে এবং তিনি অতি-ডানপন্থি এবং গোঁড়া ধর্মীয় দলগুলোর কট্টর মন্ত্রীদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি বিচ্ছিন্ন সরকারকে একত্রিত করতে লড়াই করছেন।

তিন মাস পর নেতানিয়াহু তার শত্রুপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে এক অসাধারণ সামরিক বিজয়ের দাবির ওপর ভাসছেন। জানা গেছে, তিনি এখন আগাম নির্বাচন দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আরও একটি মেয়াদের কথা ভাবছেন।

গত সপ্তাহের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে, ৭৫ বছর বয়সী এই নেতা বলেছেন যে, তার এখনো অনেক মিশন সম্পন্ন করা বাকি আছে এবং যতদিন ইসরায়েলের জনগণ তাকে চাইবে ততদিন তিনি তা করতে চাইবেন।

তিনি ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত সপ্তাহের শেষের দিকে এসে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়ার (যেটি এখনো নিশ্চিত নয়) দাবিকে একটি সুযোগের জানালা হিসেবে উপস্থাপন করেন তিনি।

এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয় এবং কেবল তিনিই গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্ত করা এবং হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন। বৃহত্তর আঞ্চলিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এগুলো করতে পারবে বলে তিনি যুক্তি দেন।

কিন্তু আগাম নির্বাচন আহ্বান করা একটি বড় ঝুঁকি হবে এবং সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাত থেকে জনপ্রিয়তায় যতটা উল্লম্ফন আশা করেছিলেন ততটা উপভোগ করতে পারেননি।

নেতানিয়াহুর প্রতি বিশ্বাস ইসরাইলের মাআরিভ সংবাদপত্রে একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ইসরায়েলি পার্লামেন্ট বা নেসেটের ১২০টি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য জোট গঠন গুরুত্বপূর্ণ।

আর বিদ্যমান ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে যথেষ্ট পিছিয়ে থাকবে এবং ডানপন্থি ছোট দলগুলোর সমর্থন পেতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হতে পারে।

একই জরিপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখানো হয়েছে যেখানে ৫৯ শতাংশ ইসরায়েলি চান যে জিম্মিদের বিনিময়ে গাজায় যুদ্ধ এখনই বন্ধ হোক।

উত্তরদাতাদের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৪৯ শতাংশ মনে করেছেন যে, নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ তার নিজস্ব রাজনৈতিক বিবেচনা।

ইসরাইল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অধ্যাপক তামার হারম্যান বলেন, লোকটি একজন অত্যন্ত দক্ষ রাজনৈতিক অভিনেতা। তিনি বলেন, ইসরায়েলে তার চেয়ে দক্ষ রাজনীতিবিদ আর কেউ নেই।

কিন্তু তিনি এটাও বলেন, বিশ্বাস নেতানিয়াহুর জন্য একটি বড় সমস্যা। ক্ষমতার লাগাম আঁকড়ে ধরার জন্য এত বার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন এমন একজন রাজনৈতিক নেতাকে বেশিরভাগ ইসরাইলিরা আর বিশ্বাস করে না।

অধ্যাপক হারম্যানের ইসরাইল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট শিগগিরই প্রকাশ করবে এমন এক নতুন জরিপের তথ্য হলো, নেতানিয়াহু ইসরায়েলিদের পূর্ণ বা আংশিক আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের সীমা অতিক্রম করেননি।

এই তথ্য জানিয়ে অধ্যাপক হারম্যান বলেন, কিছু দিক থেকে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা ইরান আক্রমণের চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ (নেতানিয়াহুর জন্য), কারণ মধ্যপ্রাচ্যে আপনি সত্যিই জানেন না যে ছয় মাসের মধ্যে আপনি কোথায় থাকবেন।

অনেক ইসরাইলির অভিযোগ, নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত করে ইসরাইলের বৈশ্বিক অবস্থান এবং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষতি করছেন।

যদিও অনেক প্রাক্তন জেনারেল বলেছেন যে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ গাজায় সামরিকভাবে যতটা সফলতা পাওয়া সম্ভব ততটাই অর্জন করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com