বৃহস্পতিবার, ১০:১২ অপরাহ্ন, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

অস্তিত্ব সংকটে রংপুর অঞ্চলের নদী

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫
  • ৩ বার পঠিত

রংপুর অঞ্চলে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উজানে নদ-নদীগুলোতে ভারতের বাঁধ নির্মাণ, কম বৃষ্টিপাতে নাব্য হ্রাস ও দখল-দূষণের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে রংপুর অঞ্চলের নদ-নদীতে। নদ-নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথও রুদ্ধ হয়ে গেছে। প্রভাব পড়েছে ফসল উৎপাদন ও কৃষি অর্থনীতিতে। জলবায়ু পরিবেশের বিরূপ প্রভাবের ফলে এ অঞ্চলের পরিবেশ বিপন্ন হতে চলেছে। এক সময়ে রংপুর অঞ্চলের নদীগুলো ছিল প্রমত্তা যৌবনা।

এখন হারিয়ে যেতে বসেছে অস্তিত্ব। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। নদ-নদীগুলোর তলদেশে চর জেগে ওঠায় সেখানে স্থানীয়রা কৃষিকাজ করছেন। কোথাও নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে পানির গতিপথ পরিবর্তন করছেন স্থানীয় লোকজন। এতে পানি সংকটের কারণে জমিতে বাড়তি পানি সেচ দিতে হচ্ছে। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ খরচের বোঝা বইতে হচ্ছে কৃষক পরিবারগুলোকে। কৃষি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় অনেক জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। অধিক শুষ্কতার কারণে জমির উর্বরা শক্তিও কমে যাচ্ছে।

নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের অধীনে রাষ্ট্রীয় পরিচর্যায় নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। শতভাগ আগের অবস্থায় ফেরানো না গেলেও এখন নদীগুলো যে অবস্থায় আছে, তা অবিকৃত রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এমনকি অনেক দখলদারকে উচ্ছেদ করে নদীর প্রাণ ফেরানো সম্ভব। এতে নদীগুলো বিলুপ্তির কবল থেকে রক্ষা পাবে।

রংপুর জেলায় ২৮টি নদ-নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-তিস্তা, বুড়ি তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, চিকলি, শাখা চিকলি, বুল্লাই, টেপরীর বিল, মরা, নলেয়া, মানস, ধুম, খটখটিয়া, বাইশা ডারা, আলাইকুড়ি, বুড়াইল, খোকসা ঘাঘট, আখিরা, ভেলুয়া, কাঠগিরি, নেংটি ছেঁড়া, করতোয়া, সোনামতি, নলশীসা, ধরলা, দুধকুমর, নীল কুমুর, ব্রহ্মপুত্র ও মাশানকুড়া। যেসব নদীর অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে সেগুলোতে এখন গড়ে উঠছে বসতি ও ফসলের খেত। অনেক স্থানে এসব নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

একসময় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, সদর উপজেলা, কাউনিয়া ও পীরগাছায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃতি ছিল মানস নদীর। এ নদীর এখন কোনো অস্তিত্ব নেই বললে চলে। জমির বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। নৌকার পরিবর্তে সেখানে চলছে এখন কলের লাঙল। ৪ দশক আগেও মানস নদীতে নৌকা চলেছে পাল তুলে। হাজার হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছে। সেই মানসের বুকে এখন ফসলের আবাদ হচ্ছে। মানস নদীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টির মতো খেয়াঘাট ছিল। সেগুলো এখন অতীত।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর ধরলা, রংপুরের কাউনিয়ার মানস নদী, গঙ্গাচড়ায় তিস্তা ও নগরীর ঘাঘট নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একসময়ের প্রাণচাঞ্চল্য এসব নদী এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। পানি না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান চাষ করার জন্য মানস নদীজুড়েই ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে ধরলা, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর তলদেশে। কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর এলাকার কৃষক সহিদুল আলম বলেন, মানস নদীতে এবার খুব সহজেই বীজতলা তৈরি করা গেছে। কারণ গত বছরের চেয়ে এবার নদীতে পানি খুব কম ছিল। কোথাও আবার কোনো পানির অস্তিত্বও ছিল না। রিভারাইন পিপলের পরিচালক, নদী গবেষক ও অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, একসময় রংপুর অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে সারা বছর ছিল প্রমত্তা যৌবনা। কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী ও মানসের বুক চিরে ১২ মাস নৌকা চলত। খেয়াঘাটগুলোতে কাজ করে বিপুল সংখ্যক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। এখন এসব অনেক নদ-নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। রংপুর নগরীসহ মিঠাপুকুর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা ও ঘাঘটকে কেন্দ্র করেই এসময় গড়ে উঠেছিল অসংখ্য খেয়াঘাট। এসব ঘিরে জেলে পরিবার ও খেয়াঘাটের মাঝিরা জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা এখন পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছেন।

গঙ্গাচড়ার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, তিস্তার বুকে এখন বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। যে যেখানে পারছেন সেখানেই দখল করে কৃষিকাজ করছেন। একসময় তিস্তার মহিপুর ঘাটে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন শমসের আলী। তিনি বলেন, তাদের তিন পুরুষের পেশা ঘাটের মাঝি হিসাবে কাজ করা। এখন তিস্তা নদীর গঙ্গাচড়ায় প্রায় ১৬টি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com