ঢাকার এক সাধারণ পরিবারের ছেলে রাফি, পড়াশোনার জন্য মালয়েশিয়ায় আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই পার্ট টাইম কাজ করতে থাকে একটি কফি শপে। প্রতিদিনের মতোই এক সকালে কফি বানাচ্ছিল সে, হঠাৎ দরজা খুলে ঢুকলেন একজন সুন্দরী মেয়ে — ইন্দোনেশিয়ার বিমানবালা, নাম তার নাদিয়া। চোখে সানগ্লাস, হাতে ছোট্ট একটা ব্যাগ, মুখে হাসি। রাফি তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ, যেন সময় থেমে গেছে। নাদিয়া ইংরেজিতে বললো, “One cappuccino, please.” রাফি কফিটা বানিয়ে দিলো, আর সাহস করে বলল, “You look like someone who loves sky more than ground.” নাদিয়া হেসে বললো, “Maybe, but today I needed a coffee more than clouds.” সেই হাসিটাই ছিল রাফির জীবনের নতুন সূচনা। এরপর প্রায় প্রতিদিনই নাদিয়া আসতো সেই কফি শপে, কখনো একা, কখনো ক্লান্ত মুখে। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো তাদের। নাদিয়া জানলো রাফি পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও সামলাচ্ছে। রাফি জানলো নাদিয়ার স্বপ্ন একদিন নিজের এয়ারলাইন শুরু করার। একদিন বৃষ্টি পড়ছিল প্রবলভাবে। নাদিয়া কফি শপে এসে ভিজে গিয়েছিল, রাফি তাকে গরম তোয়ালে দিলো। সে বললো, “তুমি জানো, তোমার মতো মানুষ আকাশে থাকলে আমি প্রতিদিন উড়তে চাইব।” নাদিয়া একটু থেমে বললো, “আর তুমি যদি আমার পাশে থাকো, আমি মাটিতেও সুখী হব।” সময়ের সাথে তাদের বন্ধুত্ব গভীর প্রেমে পরিণত হলো। রাফি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করল, নাদিয়া চাকরি পেলো সিঙ্গাপুরে। দূরত্ব তৈরি হলো, কিন্তু ভালোবাসা হারায়নি। তারা প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা বলত, একে অপরের জন্য ছোট ছোট সারপ্রাইজ পাঠাত। একদিন রাফি বিমানবন্দরে গিয়ে অপেক্ষা করছিল। ইন্দোনেশিয়া থেকে নাদিয়া আসছে—ফ্লাইট নম্বর GA-303। বিমান অবতরণের পর নাদিয়া দৌড়ে এসে রাফিকে জড়িয়ে ধরল, চোখে অশ্রু, মুখে হাসি। রাফি বললো, “এই আকাশ, এই দূরত্ব—সবকিছু হার মানে তোমার একটুখানি ভালোবাসার কাছে।” নাদিয়া বলল, “তুমি শুধু আমার কফি শপের ভালোবাসা নও, তুমি আমার জীবনের ফ্লাইট।” তারপর তারা দুই দেশ, দুই সংস্কৃতি, দুই ভাষা ছাড়িয়ে এক হলো এক হৃদয়ে। এভাবেই এক ইন্দোনেশিয়ান বিমানবালা আর এক বাঙালি ছাত্রের প্রেম আকাশের উচ্চতা ছুঁয়ে গেল—যেখানে ভালোবাসার কোনো পাসপোর্ট লাগে না, লাগে শুধু দু’টি মনের এক হওয়া।
এম ডি খুরশেদ আলম, ফেসবুক থেকে সংগ্রহ