শনিবার, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সমর্থন করে না বিএনপি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইন বক্তব্যের জেরে দেশজুড়ে ফ্যাসিস্টদের স্থাপনায় হামলাসহ চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিকে সমর্থন করছে না বিএনপি। দলটি মনে করে, চলমান পরিস্থিতি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। অন্তর্বর্তী সরকার এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতি চলমান থাকলে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ব্যাহত হবে। এই অবস্থায় দলের উদ্বেগ, অবস্থান এবং করণীয় বিষয়ে মতামত তুলে ধরতে আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বিএনপি।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, পতিত শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ফ্যাসিস্টদের স্থাপনায় হামলায় কাউকে সরাসরি দোষারোপ অথবা প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি করবে না বিএনপি। একইসঙ্গে এই ধরনের কর্মকা-ে দলের নেতাকর্মীরা যাতে না জড়ায় সে ব্যাপারে দলের সর্বত্র সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চলমান বিশৃঙ্খলার প্রতি বিএনপির যে সমর্থন নেই- বিভিন্ন সভা-সেমিনারেরর মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবে দলটি।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া শেখ হাসিনার এক ভার্চুয়াল বক্তব্যের প্রতিবাদে গত বুধবার রাজধানীর ৩২ নম্বরের বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়। দলটি বলেছে, নিয়ন্ত্রণের ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে দলটি। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কড়া বার্তা দেয়।

এ নিয়ে নানা গুজবে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো নেতা স্থান পরিবর্তন করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক চলে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলমান পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেন নেতারা।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাক্সক্ষা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এতে গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশজুড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রলম্বিতের ষড়যন্ত্র ও একধরনের ফাঁদ হিসেবে মনে করে বিএনপি। তাই নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও হিংসাত্মক কর্মকা-ে জড়িত না হতে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা তৃণমূলে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকা-ে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন জড়িত না হয়। বিএনপির প্রত্যাশা, দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই নির্দেশনা দলের প্রতিটি নেতাকর্মী অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের এতদিন পর দেশজুড়ে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পেছনে টার্গেট হচ্ছে বিএনপি ও নির্বাচন। একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ছাত্ররা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। উদ্দেশ্য- নির্বাচন প্রলম্বিত করা, যাতে দ্রুত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হয়। কারণ, ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে সারাদেশে সংগঠনকে সুসংহত করতে যথেষ্ট সময় চায়। অন্যদিকে, বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে। এ অবস্থায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।

বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেছেন, একটি দেশে বিপ্লব, গণ-অভ্যুত্থানের পর পরই নানান ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এতদিন পরে এসে কেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটবে। দেশ কি স্থিতিশীল হবে না?

জানা গেছে, বৈঠকে দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিভাগীয় ও জেলা জেলায় সমাবেশ। এই ইস্যুতে রমজানের আগেই কর্মসূচি শুরু হবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে। তা না হলে আগামী জুলাই-আগস্টে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে দলটি। মূলত নির্বাচন দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বিএনপি।

বিএনপি মনে করে, চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের যে লক্ষ্য, সেটি পূরণ হবে না। ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই এই সরকারের লক্ষ্য; গত এক দশক ধরে যে ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশ হয়নি। কারণ, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দেশে ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে; যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারেনি কিংবা দেয়নি।

এদিকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহ্যবাহী ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সময় গত ৬ ফেব্রুয়ারি অংশ নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি তার একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমান। আগামীকাল রবিবার মহাসচিব দেশে ফিরবেন। পরদিন সোমবার তার নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দলের অবস্থান জানাবে। একইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরা যাতে কোনো অবস্থাতেই কোনো উসকানিতে পা না দেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com