অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করায় তাকে আমরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সোমবার মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদের যদি, আবারও বলছি যদি, অল্পকিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’
প্রধান উপদেষ্টার এই সময়োচিত ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। বস্তুত রাজনৈতিক দলগুলোসহ নির্বাচনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার এবং সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের কৌতূহল ছিল-কবে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের এ কৌতূহলের অবসান হয়েছে, এটা বলা যায়। যদিও বিএনপিসহ কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন, তবে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছেন, সেটাকে সবাই ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো এখন তাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে পারবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন সহযোগীরাও একটি বার্তা পেলেন, যা দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে উপযোগী হতে পারে।
আমরা প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত এ নির্বাচনি সময়সীমাকে যথাযথ বলে মনে করি। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে। এ সরকার তো কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্যই আসেনি, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কার করাও লক্ষ্য। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার সম্পন্ন করে যেতে পারবে না, সেগুলো নির্বাচিত সরকারকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে অন্তত নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো সম্পন্ন করেই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। ভুলে গেলে চলবে না, বিগত সরকার দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে গেছে। কাজেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, ততটুকু করতেই হবে। যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে, তা যথার্থই সুষ্ঠু এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা কাম্য। মনে রাখতে হবে, ওই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেশে গণতন্ত্রের পরবর্তী ভিত নির্মিত হবে। আর একটি নির্বাচিত সরকারই আনতে পারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবে কমিশন। এর মধ্য দিয়ে আরও সুনির্দিষ্ট হবে নির্বাচনের সময়।