মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করার অভিযোগে ‘ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের’ স্বত্বাধিকারী ও কথিত ২৫ সিন্ডিকেটের হোতা রুহুল আমিন স্বপনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। বিসিসির সিনিয়র সহকারী সচিব মিনারা নাজমীনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের এই অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ইস্কাটনের বিসিসি অফিসে ক্যাথারসিসের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন বা তার প্রতিনিধিকে অনুসন্ধান দলের সামনে শুনানিতে অংশ নিতে তলব করে প্রতিযোগিতা কমিশন। বিসিসি সম্মেলনকক্ষে শুনানি হয়। শুনানিতে রুহুল আমিন স্বপন উপস্থিত না থাকলেও তার দুই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অনুসন্ধান দলের প্রধান মিনারা নাজমীন উপস্থিত না থাকলেও অন্য সদস্য বিসিসির সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর দেড়টায়। শুনানি শেষে ক্যাথারসিসের প্রতিনিধিরা বিসিসি অফিস ত্যাগ করেন। শুনানিতে কী হয়েছে জানতে চাইলে কোনো প্রতিনিধি কথা বলেননি।
এদিকে বিসিসির সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের সদস্য মো. নাজমুল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ক্যাথারসিসের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের দুই প্রতিনিধি শুনানিতে অংশ নেন। পরবর্তী শুনানির জন্য তারা এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। তদন্ত দলের প্রধান তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের পথ সৃষ্টি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিতর্কিত ও একতরফা সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) মধ্য দিয়ে। এই ত্রুটিপূর্ণ এমওইউ এখন ২৫ এজেন্সিকে উপকৃত করছে। শ্রমিকদের অধিকার পদদলিত করছে এবং হাজারেরও বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিয়োগকারীকে বঞ্চিত করছে।
জানা গেছে, ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে চিঠি লিখে জানান যে মালয়েশিয়া অটোমেশনের মাধ্যমে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে বেছে নিয়েছে। এর জবাবে গত ১৮ জানুয়ারি ইমরান আহমেদ এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন করা আমাদের প্রতিযোগিতা আইন এবং আইএলও সনদের বিরুদ্ধে।
বেশ কয়েক মাস পর সারাভানন ঢাকা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিংয়ে যোগ দেন। তার সফরকালে সারাভানান সাংবাদিককে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনুমোদনের পর কার্যকর হবে।
সাধারণত কর্মী নিয়োগকারী দেশ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এটি করব।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই করার সুযোগ মালয়েশিয়া সরকারের ওপর নির্ভর করে। আর এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউতে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এই তদন্তে অংশ নিতে হবে। কারা এই সিন্ডিকেশন তৈরির পিছনে রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রতিযোগিতা কমিশন মন্ত্রণালয়কে এমওইউর ধারা পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।