রবিবার, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি হইনি, এটাই আমার অন্যায়: জবি শিক্ষার্থী মিম

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪
  • ৪৮ বার পঠিত
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের আসতে শুরু করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর প্রতিষ্ঠানটির আরও অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করেছেন। শিক্ষকদরে বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগও রয়েছে গুরুতর। যৌন হয়রানি, হুমকিসহ পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃত ফেল করিয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে এতে। অবন্তিকার আত্মহত্যার পর সামনে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন গাফিলতি।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) অবন্তিকার মৃত্যুর পর থেকেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রোববার (১৭ মার্চ) ফাইরুজ অবন্তিকার ‘হত্যায়’ জড়িতদের অবিলম্বে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবিতে জবি ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার বর্ণনা দেন এবং এর সঠিক বিচার দাবি করেন তারা।বিশ্ববিদ্যালটির ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অকার্যকর রয়েছে নিপীড়নবিরোধী সেল। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা করেন এভাবে- ‘আমি শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হাওয়ায় আমার জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। ভয়ভীতির মুখে পড়েছি। আমাকে পুরো একা করে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা দিলেও ফেল করানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে একা করে দিয়েছে শিক্ষকরা। প্রতিবাদের ফলাফলস্বরূপ আমাকে অনার্সে ফেল করে দেওয়া হয়েছে। আমি যখন অভিযোগ করি, তখন কোনো সেল ছিল না। এজন্য আমাকে ভিসি স্যার বরাবর অভিযোগ করতে হয়। এরপর আমার বিরুদ্ধে প্রেশার আসে। যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সে আমার বাড়িতে পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। বাবা-মা অসুস্থ, তাদের ওপর প্রেশার দেয়া হয়েছে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য। আমি অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় বিভাগে কোনো মহিলা শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও দরজা আটকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে আমার সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে বলা হয়েছে, আমার পক্ষে যেন কোনো নিউজ না হয়। মেয়েটি সাহসী বলে মারা গিয়েছে। আমি সাহসী না বলে মারা যাইনি। হয়তো এরপর আমি মারা যাবো। আমার ক্লাসমেটটরা আমার সঙ্গে মিশতে ভয় পায়। আমি দুই বছর ধরে একা। আমার সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় অভিযুক্ত শিক্ষক। আমার শিক্ষকরা আমার এসাইন্টমেন্ট নিতে চান না। আমাকে দুই সেমিস্টারে ফেল করানো হয়েছে। ফাইনাল ইয়ারে ভাইভায় ফেল করানো হয়েছে। আমি নন-পলিটিক্যাল শিক্ষার্থী।’ফারজানা বলেন, ‘আমি শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি হইনি, এটাই আমার অন্যায়। এর আগে ইনকোর্স পরীক্ষায় আমাকে ৪০ এ ০ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান স্যার আমাকে ১০০তে ৩ দিয়েছেন। আমি যে বেঁচে আছি, এটা খোদা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি আমার বাবাকে বলা হয়েছিল, আমাকে বিভাগ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এই একটা শিক্ষার্থীর জন্য ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’
মিম বলেন, ‘তিনি এখনো বহাল আছেন। তিনি আমাকে কাজের জন্য তার অফিস রুমে ডেকে নিয়ে হ্যারাজ করেন। এটা নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই ভুগছি, যখন আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আমাকে প্রতিনিয়ত ফেল করানো হচ্ছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা হচ্ছে। আমার বাবাকে বলা হয়েছে, আপনার মেয়েকে বহিষ্কার করে দেবো। নতুন করে যে কমিটি করা হয়, তার সদস্য ভিসি সাদেকা হালিম ম্যাডাম। তিনি অনেক নারীবান্ধব। কিন্তু ম্যাডামের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আমি এখন পর্যন্ত বিচার পেলাম না। কয়েক দফা রিপোর্ট আসা সত্ত্বেও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন সুপ্রিম কোর্টে রিট করেছেন। একজন শিক্ষক কতোটা বেহায়া হলে নিজের দোষ ঢাকতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। সুপ্রিম কোর্ট থেকেও হেরে গেছেন।’
মিম বলেন, ‘আমি সারাক্ষণ অনিরাপত্তায় ভুগি। আমার পরিবার অনিরাপত্তায় ভোগে। কিন্তু যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না বা প্রকাশ করছে না তারাও যে নিরাপদ, বিষয়টা তেমন না। একজন শিক্ষার্থী যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ দেয়, তখন তার চরিত্র নিয়ে যেসব কথা বলা হয়; তা প্রকাশ করা যায় না। আমার বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে যখনই কেউ কথা বলেন, তখনই আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেন।’
এই ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘কোর্ট কিন্তু যে রিট করেছিল, সেটা খারিজ করে দিয়েছে। পরিতাপের বিষয় ফারজানা মিমের চেয়ারম্যানের পরীক্ষায় সে ফেল করেছে। মিম গ্রেড শিট নিয়ে দেখা করেছে। সোমবার (১৮ মার্চ) আমরা গ্রেড শিট নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কাল মিটিং করবো। ফারজানা মিমের প্রতিটি বিষয় আমরা দেখবো।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com