কালের বিবর্তনে ঋতুরাজ বসন্তে এখন আর তেমন চোখে পড়ে না রক্ত লাল শিমুল। মূল্যবান এই গাছ এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। তবে দিনাজপুর-দশ মাইল মহাসড়কে শিমুল গাছে ফুল ফুটেছে, যেন লাল শাড়ি পরে আছে। বসন্তের ফাল্গুনে প্রকৃতি যেন ফুটে তুলেছে।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের অধ্যাপক এটিএম শফিকুল ইসলাম এভাবেই তার মনের ভাব প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, দিনাজপুর সদর উপজেলার করনাই গ্রামের আদিবাসী মহল্লায় বেশ কিছু শিমুল গাছ রয়েছে। ওই শিমুল গাছগুলোতে বসন্তের ফাল্গুনের শুরু থেকে রক্তিম রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে শিমুল গাছের ফুল। শুধু ফুল আর ফুল, পাতা নেই। ফুটন্ত এ ফুল যেন সকলের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। আর এ রক্ত লাল থেকে সাদা ধূসর হয়ে তৈরি হয় তুলা। কিন্তু এখন বিভিন্ন প্রযুক্তিতে তুলা তৈরি ও ফোম ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিমূল তুলা ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। তবে এখনো দিনাজপুর-দশমাইল মহাসড়কের বাঁশেরহাট নামক স্থানে রাস্তার দুই ধারে শোভা বাড়িয়ে আছে লাল টুকটুকে শিমুলের বন। এ মহাসড়কের বিভিন্ন গাছের ফাঁকে ফাঁকে শতাধিক শিমুল গাছ রয়েছে। পাখিরা উড়ে এসে বসছে লাল শিমুলের ডগায়। ঝড়ে পড়া শিমুলের লাল গালিচার রূপ দেখা যায় শিমুলতলায়। মোহনীয় রূপে প্রকৃতিকে রাঙিয়েছে শিমুল। যা পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের দৃষ্টি কাড়ছে।
তিনি বলেন, ফাগুনের শেষে বসন্তের আবহে গাছে গাছে পরিপক্ব শিমুল ফুল। কাকডাকা ভোরে রাস্তায় ঝরে পড়া ফুলগুলো দেখে মনে অন্যরকম অনুভূতি জাগে। মনে হয় যেন রক্তিম পথ। শিমুল ফুল না ফুটলে যেন বসন্ত আসে না।
তিনি বলতে থাকেন, হাবিপ্রবির মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের এসব দৃশ্য সরজমিনে গবেষণার জন্য দেখানো হয়। চলমান প্রকৃতির রূপ নিয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করানো হয়। এবারে এ দৃশ্যটি তাদের ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিবেশের সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চারও একটি যোগ সূত্র রয়েছে। গাছে গাছে ফুটন্ত এ শিমুলের লাল রঙ যেন চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরপর এ রক্ত লাল থেকে সাদা ধূসর হয়ে তৈরি হয় তুলা। শিমুলের তুলার রয়েছে আলাদা কদর।
দিনাজপুর হাবিপ্রবির ফরেষ্ট বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল বারী জানান, এখন থেকে প্রায় দুই দশক আগে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় গাছে গাছে শোভা বর্ধন করতো এ শিমুল ফুল। তবে কালের বিবর্তনে ঋতুরাজ বসন্তে এখন আর যেখানে সেখানে চোখে পড়ে না রক্তলাল শিমুল গাছ। মূল্যবান শিমুল গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তর পথে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলল ফুটন্ত ফুলের রক্ত লাল শিমুল গাছ। রক্ত লাল শিমুল চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে রঙ।
দিনাজপুর বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, শহরের মিশন রোডের মোড়ে কালী মন্দিরের পিছনে একটি ঐতিহাসিক শিমুল গাছ ছিল, সেটি অযত্নে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শিমুল গাছ ওষুধি গাছ হিসেবে পরিচিত। গ্রামের মানুষ এক সময় আখের গুড় তৈরিতে শিমুলের রস ও কোষ্ঠ কাঠিন্য নিরাময়ে শিমুল গাছের মূলকে ব্যবহার করতো।
সদরে গোলাপগঞ্জ হাট এলাকার কবিরাজ দয়াল চন্দ্র রায় জানান, গ্রাম বাংলার মানুষদের এ শিমুল গাছ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিত। মানুষরা এ শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করতো। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে বানাতো লেপ, তোষক ,বালিশ। কিন্ত আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছ।
বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রযুক্তিতে তুলা তৈরি ও ফোম ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিমুল তুলা অনেকে ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে। বাংলার চিরন্তন রূপ শিমূল পলাশের লাল সৌন্দর্য থেকে আজ আমরা সরে আসছি। ফলে শিমুল গাছ বিলুপ্তর পথে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রকৃতি ধরে রাখতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গাছ গাছালি সুরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। তবেই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে আসবে।
সূত্র : ইউএনবি