সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে রায়হান শরীফ নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে পায়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার সিরাজগঞ্জ সদরের শিয়ালকোল এলাকায় অবস্থিত ওই মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ওই শিক্ষার্থীর নাম আরাফাত আমিন। তিনি ওই মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বগুড়া পৌর শহরের নাটাই পাড়া ধানসিঁড়ি মহল্লার আবদুল্লা আলামিনের ছেলে।
এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ আরাফাত আমিন ও তাঁর কয়েকজন সহপাঠী বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ ক্লাস রুটিনে ক্লাস না থাকা সত্ত্বেও সময়–অসময়ে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে তাঁর ক্লাস করতে বলতেন। তিনি গতকাল রোববার বিকেলে হঠাৎ আরাফাতসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ফোন করে ক্লাসে আসতে বলেন। কিন্তু আরাফাতসহ শিক্ষার্থীদের কেউই ক্লাসে আসেননি। আজ বেলা তিনটার দিকে ফরেনসিকের ভাইবা ক্লাস চলার সময় তিনি গতকালের প্রসঙ্গ তুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাক্বিতণ্ডা করতে করতে একপর্যায়ে পকেট থেকে পিস্তল বের করে গুলি করেন। গুলিটি আরাফাতের ডান পায়ের ঊরুতে লাগে। তাঁর চিৎকারে সবাই এগিয়ে এসে তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। পরে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষককে তালাবদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে ওই পিস্তুলসহ নিয়ে যায়।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক কামরুল হাসান বলেন, আরাফাতের জরুরি ভিত্তিতে চিকিত্সা চলছে।
কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান আবদুল্লা হেল কাফি বলেন, শিক্ষার্থী আরাফাত ডান পায়ের ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, গুলিটি বের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি অনেকটাই সুস্থ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কলেজের কয়েকজন ছাত্রী ও ওই কলেজ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রায়হান শরীফ মাঝেমধ্যে রাতে ছাত্রীদের ভিডিও কল দিতেন ও বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব ও ভয়ভীতি দেখাতেন। এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয়নি। এমন কী রায়হান শরীফ কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতা দেখিয়ে তিনি ক্লাস নেন। ক্লাস চলার সময় ছাড়াও প্রায়ই তিনি পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করতেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবদুল হান্নান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফকে একটি অবৈধ পিস্তলসহ আটক করা হয়েছে। তবে তিনি কয়টি গুলি ছুড়েছেন, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টির তদন্ত চলছে। ওই শিক্ষক প্রতিদিন ক্লাসে পিস্তল নিয়ে আসতেন। আজ বিকেলে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গুলি ছোড়েন। এ সময় গুলিতে আহত হন শিক্ষার্থী আরাফাত। এ বিষয়ে কলেজের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত করতে ওই কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি পুরোপুরি জানার চেষ্টা করছি।’