এবারের বিপিএলে বেশ আধিপত্য ধরে রেখেছে দেশীয় ক্রিকেটাররা। ব্যাটে-বলে আলো ছড়াচ্ছেন তারা। আলোচনায় উঠে এসেছেন আড়ালে থাকা অনেকেই, অনেকের জন্যই আবার তা ফিরে আসার মঞ্চ। তবে এর মাঝেও রয়েছে হতাশা। প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ অনেকেই, পারেননি আশানুরূপ ভালো করতে।
বিপিএলে শুরু হয়ে গেছে শিরোপার লড়াই। ৪২ ম্যাচের লড়াই শেষে নিশ্চিত হয়েছে শেষ চার। বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে বাকি তিন দলের। যেখানে বড় দায় দেশীয় ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা। তারা জ্বলে উঠতে না পারাতেই দলকে বিদায় নিতে হয়েছে লিগ পর্ব থেকেই।
আজ কথা বলছি চলতি বিপিএলে এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত পারফর্ম করতে না পারা ক্রিকেটারদের নিয়ে-
১. নাজমুল হোসেন শান্ত : এবারের বিপিএলে যেন মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখলেন শান্ত। গত আসরে রেকর্ড রান নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতা এই ব্যাটার এবার হালে পানিই পাননি। জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটের এই অধিনায়ক প্রত্যাশা পূরণ তো দূর, পাননি সান্ত্বনা দেয়ার মতো রানও।
এবারের আসরে সিলেটের হয়ে ১২ ম্যাচের সবগুলো খেলে মাত্র ১৭৫ রান করেছেন শান্ত। যেখানে গড় মাত্র ১৪.৫৮, স্ট্রাইকরেট আরো বাজে; ৯৩.৫৮। নেই কোনো ফিফটি, সর্বোচ্চ ৩৯। নেই রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা বিশে! সব মিলিয়ে আসরটা ভুলেই যেতে চাইবেন তিনি।
২. রনি তালুকদার : বড় হতাশ করেছেন রনি তালুকদার। রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলা এই ব্যাটার পারেননি নামের প্রতি সুবিচার করতে। জাতীয় দলে দুল্যমান থাকা এই ব্যাটার পারেননি সুযোগ কাজে লাগাতে। এমনকি নিজ দলের একাদশেও জায়গা হারিয়েছেন তিনি।
রংপুরের হয়ে রনি এই আসরে ৯ ইনিংসে করেন মাত্র ১৪৪ রান। যেখানে গড় মাত্র ১৬। আর স্ট্রাইকরেট ১১৯.১। যেখানে ত্রিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস মাত্র একটাই, ৩৯।
৩. মেহেদী মিরাজ : চলতি আসরে হতাশার আরেক নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। আসরের শুরুতে বরিশালের নেতৃত্বের আলোচনায় থাকা এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে রীতিমতো ধুঁকছেন এবারের আসরে। তারকাখচিত দলটার হয়ে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। সুবাদে হারিয়েছেন টপ অর্ডারে নিজের জায়গা।
আসরে ৯ বার ব্যাট করতে নেমে ১৭ গড়ে করেছেন মাত্র ১১৯ রান। স্ট্রাইকরেট যদিও ভালো, ১৫৪.৫৫। তবে নেই কোনো চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। আছে রান সংগ্রাহকের তালিকায় ৩৯ নম্বরে। বল হাতে অবশ্য ১১ ইনিংসে আছে ১০ উইকেট। ইকোনমি ৬.৮১।
৪. মোসাদ্দেক হোসেন : টানা এগারো হারে সবার আগে আসর থেকে ছিটকে যাওয়া দুর্দান্ত ঢাকার অধিনায়ক ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দলের মতো অবস্থা ছিল তার নিজেরও, রীতিমতো লজ্জায় মাথানত হবার মতো একটা আসর কাটিয়েছেন তিনি। ভাবা যায়, তার দলের বোলার তাসকিন আহমেদের রান সংখ্যাও তার চেয়ে মাত্র ২ কম!
মোসাদ্দেক ৯ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে করেন মাত্র ৯১ রান। যেখানে গড় মাত্র ১৩, স্ট্রাইকরেট ৯২.৮৬। অবস্থা আরো বেগতিক হতো, যদি না শেষ ম্যাচে ২৩ বলে ২৬ ও ১৮ বলে ২৯* রান না করতেন! প্রথম সাত ম্যাচে তার রান ছিল মোটে ৩৬!
৫. তাসকিন আহমেদ : বল হাতে সেরা দশে জায়গা থাকলেও প্রত্যাশিত পারফর্ম করতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে খেলা এই পেসার পারেননি নামের প্রতি সুবিচার করতে। যদিও চোট সমস্যা ছিল, তবুও দেশের সেরা এই পেসার থেকে প্রত্যাশা আরো বেশি ছিল।
শেষ চার ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে উইকেটের পাল্লা ভারী করা তাসকিন প্রথম ৮ ম্যাচে নেন মোটে ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার তার। ইকোনমি ৮.৩২।
৬. নাসুম আহমেদ : জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি একাদশে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন নাসুম আহমেদ। স্পিন ভেল্কিতে নজর কাড়ছিলেন বিশ্ব দরবারে। তবে এবারের বিপিএলটা ভালো যায়নি তার, ভুলে যেতে চাইবেন সময়টা।
খুলনা টাইগার্সের হয়ে খেলা এই স্পিনার ১০ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৮ উইকেট। ইকোনমি ছিল নড়বড়ে, ৮.৫৪। দুই উইকেটের দেখা পেয়েছেন মাত্র একবার।
তাছাড়া শামিম পাটোয়ারী, জাকির হাসান, নাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ মিথুনরাও ছিলেন অধারাবাহিক। দুই-এক ম্যাচ ভালো করলেও দলের প্রয়োজন মেটাতে পারেননি তারা। বল হাতে মোস্তাফিজুর রহমান উইকেট পেলেও ইকোনমি ছিল দশ ছুঁই ছুঁই, ৯.৫৬।