রবিবার, ০১:৪২ অপরাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

টেকনাফের ওপারে মিয়ানমারে গুলির শব্দ অব্যাহত, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ৩২ বার পঠিত

কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে মিয়ানমারের গুলি ও বোমার শব্দ থেমে থেমে পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হয়ে আজ শুক্রবার পৌনে ১টার দিকেও বোমার শব্দ শোনা গেছে।

শাহপরীর দ্বীপ এলাকাটি নাফ নদীর প্রবেশমুখে সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে শুরু করেছেন তারা।

বেলা সাড়ে ১২টার পরও টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরীর সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার। তিনি বলেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদেই তিনি রয়েছেন এবং সেখান থেকে বোমার প্রচণ্ড শব্দ শোনা যাচ্ছে।

নাফ নদী থেকে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো বলে জানান তিনি।

আদনান চৌধুরী বলেন, ‘প্রচণ্ড বোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। গতকাল থেকে চলতেছে, এখনো চলতেছে।’

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র টেকনাফ-২ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরের যুদ্ধ চলছে। গোলাবর্ষণের শব্দ তারা শুক্রবার সকালেও শুনতে পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা না গেলেও গোলাবর্ষণ যে হচ্ছে, তার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে এটি ক্রমাগত হচ্ছে না, থেমে থেমে কিছুক্ষণ পর পর এই শব্দ শোনা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে সাত-আট মাইল দূরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে বলে বিজিবি ধারণা করছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মূলত শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে। তবে এর আগেও গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানান তিনি।

বিজিবির এই অধিনায়ক জানান, বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য তৎপর রয়েছেন তারা।

‘যেহেতু ঘটনাটা অনেক ভিতরে তাই আমরা তেমন একটা আতঙ্কিত হচ্ছি না,’ বলেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে এখনো কেউ প্রবেশ করতে চেয়েছে বলে তারা জানতে পারেননি। তবে এ বিষয়েও তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

‘আমাদের নজরে আসেনি, কেউ চেষ্টা করেনি (প্রবেশের), তবে আমরা তৎপর আছি। বর্ডারে আমরা অত্যন্ত ভিজিল্যান্ট আছি। আমরা কোনো অনুপ্রবেশ বা কাউকে বাইরে থেকে ভেতরে আসতে দেবো না,’ বলেন বিজিবির অধিনায়ক।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমারের মংডু এলাকা থেকে এই আওয়াজ আসছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদী রয়েছে। নাফ নদীর পর থেকেও আরো তিন-চার কিলোমিটারের মতো ভেতরে মংডু অবস্থিত। ওই এলাকা থেকে হয়তো গোলাগুলি চলছে।

‘মাঝখানে নাফ নদী থাকার কারণে খুব একটা আতঙ্কিত নয় গ্রামবাসী। তবে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা নাফ নদী ও এর সংলগ্ন এলাকা এড়িয়ে চলছে। তারা মূলত গ্রামের ভেতরেই চলাফেরা করছে।’

স্থানীয় এই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বলেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা খুব একটা আতঙ্কিত না হলেও তারাও সতর্ক রয়েছে।

এখনো কেউ মিয়ানমার অংশ থেকে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করতে চাওয়ার মতো কিছু দেখা যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার অংশে ব্যাপক সংঘাত হয়।

কয়েক দিন ধরে চলা সংঘাতে মিয়ানমার সীমান্তের সামরিক টহল চৌকিগুলো দখলে নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা।

বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সাথে যুদ্ধে টিকতে না পারে গত ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উখিয়া, টেকনাফ ও ঘুমধুম সীমান্ত থেকে কয়েক দফায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মিয়ানমারের ৩৩০ জন।

পরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে জাহাজে করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

এছাড়া গত ২৮ জানুয়ারি মিয়ানমারের ভেতরে সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় সতর্কতা বাড়ায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

মিয়ানমারের সংঘাতকবলিত এলাকা বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ার কারণে তুমব্রু ও টেকনাফ সীমান্তে সতর্কতা বাড়ায় কক্সবাজার এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তখনো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোলাগুলি ও মর্টার শেল ছোঁড়ার শব্দ পাওয়ার কথা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের কয়েকটি বাড়িতে গুলি এসে পড়ে বলেও তারা জানান।

মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়।

শাহপরীর দ্বীপের পরিস্থিতি কী?
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা এবং স্থানীয় সাংবাদিক জাকারিয়া আলফাজ বিবিসি বাংলাকে জানান, শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে বোমা ফাটার বিকট শব্দেই তার ঘুম ভেঙে যায়।

তিনি জানান, স্থানীয় অনেক বাসিন্দার সাথেই কথা বলেছেন তিনি এবং প্রায়ই সবাই তাকে জানিয়েছেন যে সকালে বোমার বিকট শব্দেই ঘুম ভেঙেছে তাদের।

আলফাজ আরো বলেন, এতদিন সীমান্তের ভেতরে মিয়ানমার অংশে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। কিন্তু গতকাল ভোর থেকে সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল ও বোমার শব্দ শোনা গেছে। গতকাল সারাদিনই এই শব্দ শোনা গেছে।

‘আজকে ভোরে হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। এর বিকট শব্দ এপার থেকে শোনা গেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত এমন চলেছে। এরপর ঘণ্টা দুয়েক বন্ধ ছিল। পরে বেলা ১২টার পর আবার শোনা গেছে।’

নাফ নদীতে মাছ ধরে এমন কিছু জেলের সাথে কথা বলেছেন জাকারিয়া আলফাজ। তারা তাকে জানিয়েছে যে ভোরে কুয়াশা ভেদ করেও সীমান্ত এলাকায় হেলিকপ্টার উড়তে দেখেছেন তারা।

তিনি জানান, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে কাঁটাতার ঘেঁষে বসতি থাকলেও শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় সীমান্তের পর মাঝখানে নাফ নদী থাকার কারণে বাড়ি-ঘর কিছুটা দূরে। তাই সেখানকার মানুষ সীমান্তের এ ধরনের ঘটনার সাথে খুব একটা পরিচিত নয়।

এ কারণে প্রথমবার এ ধরনের পরিস্থিতি দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়েছেন।

‘তাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। তারা তো এইটা প্রথমবার মোকাবেলা করছে,’ বলেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com