বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ১২ জনই নারী। আবার আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামের রোগী।
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার চলতি আগস্টে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে। আর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই হার এবার গ্রামেই বেশি। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যন্ত গ্রামেও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এটা আগে কখনো এই বিভাগে দেখা যায়নি।
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আসমা আক্তার (৩০) নামের ওই নারী গত শনিবার রাতে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান। তিনি ওই দিন সকালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি ওই উপজেলার বালিহারি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হলো।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যে ১৯ জন মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে নারীদের মৃত্যুর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এই পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১২ জনই নারী। বাকি সাতজন পুরুষ। মোট মৃত্যুর অধিকাংশেরই বয়স ৫০ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশ এবং মারা যাওয়া ব্যক্তিদের শতভাগ গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় এটা সহজেই ধারণা করা যায়, এবার বিভাগের প্রত্যন্ত গ্রামেও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা ছড়িয়ে পড়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এরই মধ্যে পিরোজপুরের নেছারাবাদের বলদিয়া ইউনিয়নে এবং পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার কয়েকটি গ্রামে বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কীটতত্ত্ববিদেরা অনুসন্ধান করে ডেঙ্গুর লার্ভা শনাক্ত করেছেন। এতে অনেকটা নিশ্চিত, এবার স্থানীয়ভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে এবং সেটা প্রত্যন্ত এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগের কয়েক বছর আমরা দেখেছি, এই বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ঢাকাসহ বড় শহরে ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। এবার শুরুতে তা থাকলেও জুলাই থেকে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়া রোগীরাই হাসপাতালে আসছেন।’
ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিন কারণে ডেঙ্গু রোগীদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে দেরিতে হাসপাতালে আনা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং বহু রোগে আক্রান্ত থাকার বিষয়গুলো রয়েছে। গ্রামের নারীরা বেশির ভাগই পুষ্টিকর খাবার নেন না বলে তাঁরা পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। আবার গ্রামের নারীরা কাঁচা রান্নাঘরে দিনের বেশির ভাগ সময় রান্নাবান্নাসহ যাবতীয় কাজ করেন। এতে তাঁরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাঁদের মৃত্যুও হচ্ছে বেশি বলে ধারণা শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডলের।
জুনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু করে এই বিভাগে। জুলাইতে তা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। আর আগস্টে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। বিভাগে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ৮ জনই মারা যান চলতি আগস্টের ১২ দিনে। আর ৯ জনের মৃত্যু হয় জুলাই মাসে। দুজন মারা গিয়েছিলেন এপ্রিল ও জুনে।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৩৭৪ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এতে দেখা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ছিলেন মাত্র ৪৩৩ জন। মৃত্যু হয়েছিল দুজনের। অথচ আগস্টের প্রথম ১২ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৭৫৭ রোগী। মারা গেছেন আটজন। জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসেন ৪ হাজার ৮৬৭ জন। এক মাসে ৯ জনের মৃত্যু হয়। সে হিসাবে আগস্টের ১২ দিনেই বিভাগের মোট ডেঙ্গু রোগীর ৫২ দশমিক ৯২ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন। আর মোট মৃত্যুর ৪২ দশমিক ১০ শতাংশই ঘটেছে আগস্টের এই ১২ দিনে।
Ref: Prothom alo