ফুটেছে কদম, আজ পয়লা আষাঢ়; মেঘবতী জলের দিন। শুরু হলো বর্ষা ঋতু। চার দিকে কদমের ফুটন্ত সৌন্দর্য বর্ষার আগমনী বার্তা বয়ে আনছে। কদম ফুলকে বলা হয়ে থাকে বর্ষার বিশ্বস্ত দূত। কাঠফাটা রোদে মানুষের হাঁসফাঁস করা গরমে অঝোর ধারায় বৃষ্টি-বর্ষণের জন্য প্রতীক্ষা বাসা বাঁধছে।
আজ (মঙ্গলবার) বর্ষা ঋতুর প্রথম দিনের সকাল থেকেই জোরালো বৃষ্টিপাত। গ্রীষ্মের ধুলোময় জীর্ণতাকে ধুয়ে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সেজেছে পূর্ণতায়। প্রকৃতির সর্বত্র সজীবতা ঢেলে নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহ নিয়ে এসেছে বর্ষা।বর্ষার নবধারা জলের সঙ্গে সঙ্গে নেচে ওঠে প্রকৃতি ও জনজীবন। নতুন প্রাণের আনন্দে অঙ্কুরিত হয় গাছপালা, ফসলের মাঠ। চার পাশে অন্ধকার, মেঘের ঘনঘটা; হঠাৎ বৃষ্টির আলিঙ্গন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ভাষায়, ‘এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা/গগন ভরিয়া এসেছে ভুবন ভরসা/ দুলিছে পবনে সনসন বনবীথিকা/গীতময় তরুলতিকা।’বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায়
পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’
আমরা এটাই দেখে এসেছি যে, আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে।
আগেরকার দিনে দেখতাম গ্রামের দুরন্ত শিশু-কিশোর কদমতলায় কদম ফুল নিয়ে খেলা করত; কিন্তু আজ ধীরে ধীরে তা একেবারেই হারিয়ে যেতে চলেছে, যেন আকাল পড়েছে কদম ফুলের সৌন্দর্যে। মানুষ আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভুলে কৃত্রিম সৌন্দর্য তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গাছগাছালি ও ফলমূল।
জলবায়ু পরিবর্তনে বর্ষা যদিওবা পথ হারিয়েছে! তবু বর্ষার আগমনে কবিগুরুর ভাষায় বলতেই হয়, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,/আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,/ কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।/ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’।বর্ষার ঘন কালো মেঘ আর বৃষ্টি ভিজিয়ে দিক মহামারীকাল। প্রকৃতির সাথে সাথে উচ্ছ্বসিত হোক মানুষের হৃদয়। মনে লাগুক সজীবতার ছোঁয়া। আর বর্ষাবরণের উৎসবগুলো তোলা থাক আগামীর জন্য।