সোমবার, ০৬:১৭ অপরাহ্ন, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও লেখক এম এ শোয়েব এর শুভ জন্মদিন!

আইভি সাহাঃ
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩
  • ১৯৯ বার পঠিত

আজ ১লা জুন, বাংলাদেশের এবং বিদেশের স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও লেখক এম এ শোয়েব এর শুভ জন্মদিন!

বাংলাদেশের সর্বপ্রথম অডিও এ্যালবামের শিল্পী তিনি! এ্যালবামটি প্রকাশ হয় ১৯৮১ সালে। নাম ছিল- ‘হিটস অফ এম এ শোয়েব’। গীতিকার ও সুরকার ছিলেন তিনি নিজেই এম এ শোয়েব। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন- জাহিদ হুসাইন। এ্যালবামটি বাজারে এনেছিলো- ডিসকো রেকর্ডিং। এক বছরে এ্যালবামটির প্রায় ৪০ লাখ ক্যাসেট বিক্রি হয়েছে। এই এ্যালবামে’র অন্যতম জনপ্রিয় গান- ‘আজ থেকে বারটি বছর, তুমি আর আমি ছিনু কিশোরী কিশোর…’ সেই সময়ে প্রতিটি অলিগলিতে টু-ইন-ওয়ানে বাজতো এই গান। এই গানের প্রথম এলবামটি মোট ৪ মিলিয়ন কপি বিক্রি হওয়াতে তিনি জনপ্রিয় গুণী শিল্পীর তালিকায় পৌঁছে গেলেন। তিনি ৩০টির চেয়ে বেশি সংখ্যক সিনেমায় প্লেব্যাক সিংগার হিসেবে গান গেয়েছেন।

তাঁর ১২টি এলবামে এবং রেডিও, টিভিতে গাওয়া গানগুলোর মধ্যে নিজের লেখা ও সুরে নিজের কন্ঠে গাওয়া বেশির ভাগ গান মোট আশি শতাংশ। ৫০০ গানের চেয়ে অধিক সংখ্যক গান তাঁর নিজের লেখা এবং সুরে তিনি নিজেই গেয়েছেন এবং জনপ্রিয় হয়েছেন শ্রোতাদের হৃদয়ে। একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই গান দিয়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন এম এ শোয়েব । ক্যাসেটের অন্য গানগুলো- ‘আফ্রিকা’, ‘ওরে আমার মন’, ‘মা তোর লক্ষ ছেলের একটি ছেলে’ প্রভৃতি ছিল শ্রোতাদের কাছে ভীষণ পছন্দের। আজো তিনি সমান জনপ্রিয়! এই বিখ্যাত গুণী শিল্পীর সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য আমরা খুব সংক্ষেপে জেনে নিবো: শিল্পী এম এ শোয়েব এর শ্রদ্ধেয় পিতা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা সেই সুবাদে তিনি দেশের নানান জায়গায় ঘুরেছেন বদলিজনিত কারণে।

যদিও তাঁদের আদি নিবাস বরিশালের গৌরনদীতে। এরপর তিনি তাঁর বাবার চাকরি সূত্রে দেশের বাইরে পাকিস্তানের করাচীতে চলে গেলেন। ক্লাস ফাইভে পড়া অবস্থা থেকেই তিনি ওখানে গান গেয়ে সুনাম অর্জন করে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। করাচীর রেডিওতে গান গাইবার জন্য তিনি ক্লাস এইটে পড়ার সময় অডিশন দিয়েছেন এবং রেডিওতে অডিশন দিতে গিয়ে তিনি উর্দু ও হিন্দি গান গেয়েছেন মোট তিনটি। এবং প্রচুর প্রশংসা পেয়েছেন সেই ছোট বয়সে। এর পর ১৯৭৩ সালে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা উপলব্ধি করে তিনি জীবন বাজী রেখে এবং লোমহর্ষক এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফিরে স্বদেশের মাটিতে পৌঁছেছিলেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে দেশে ফেরার কাহিনি নিয়ে এবং যুদ্ধের সময় তাঁদের বাঙালী পরিবারের সকলের উপর বেঁচে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল। তাঁরা সবাই মিলে যে ভয়াবহ অবস্থা পার করেছেন, এ নিয়ে তিনি একটি বই প্রকাশিত করেছেন।

বইটির নাম ” পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসার ভয়ংকর দিনগুলো ” দেশে ফিরে এসে তিনি নিয়মিত সংগীত চর্চা করেছেন। তিনি নজরুল সংগীত এবং ক্ল্যাসিক্যাল শিখেছেন ‘ছায়ানট’ থেকে। যদিও তখন তাঁর অলরেডি ক্যাসেট বের হয়েছিল তবুও তিনি নিজেকে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অর্জনে নিজেকে অব্যাহত রেখেছিলেন। বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি পপ সম্রাট শ্রদ্ধেয় আজম খানকে অনুসরণ করতেন এবং ‘Saleka ore Maleka’ এই এলবামের ১০টি গান তিনি নিজে লিখে কম্পোজ করেন। প্রখ্যাত গুণী সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর এবং কুমার বিশ্বজিৎ এর সঙ্গে ১০/১২ টা এলবামে একসাথে কাজ করেছেন। কিংবদন্তি শিল্পী শ্রদ্ধেয় সাবিনা ইয়াসমিন ম্যাম এর সাথে তিনি অনেকগুলো গান ডুয়েট গেয়েছেন। সিনেমার গান ছিল এর মধ্যে বেশি। বিখ্যাত শিল্পী রুণা লায়লার সঙ্গেও অনেকগুলো গান ডুয়েট গেয়েছেন তিনি। সিনেমার গানও ডুয়েট গেয়েছেন এই শিল্পীর সঙ্গে। এর মধ্যে জনপ্রিয় হলো ” এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না” এই গানটি তিনি ভালো লাগা নিয়ে এখনো গান মাঝে মাঝে। দেশে ফিরে তিনি মিউজিক নিয়েই মন দিয়ে কাজ করে গেছেন। নিয়মিত স্টেজ পারফর্মেন্স করার পাশাপাশি তিনি তখন নিয়মিত গান গাইতেন বাংলাদেশ বেতারে এবং টেলিভিশনেও। টেলিভিশনেও তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল। তখন একটি মাত্র চ্যানেল ছিল বিটিভি। বিটিভিতে গাওয়া তাঁর প্রথম গান ‘আজ থেকে বারোটি বছর…’, আল মনসুরের শিউলি মালা অনুষ্ঠানে। এরপর আবদুল্লাহ্ আবু সায়ীদ স্যারের ‘সপ্তবর্ণা, ‘মানচিত্র’, ফজলে লোহানী’র ‘যদি কিছু মনে না করেন’, কবি আসাদ চৌধুরী’র ‘প্রচ্ছদ’, এ ছাড়া ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আনন্দ মেলা’, হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে গেয়েছেন।

এছাড়াও তিনি দেশে বিদেশে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখনো গান গেয়ে চলেছেন। দেশের প্রতি তাঁর অসীম ভালোবাসা থাকলেও কর্মজীবনের তাগিদে পরিবার নিয়ে তিনি আমেরিকার এরিজোনাতে বসবাস করছেন দীর্ঘসময় ধরে। তিনি সেখানে ” সুর ও বাণী ” নামে একটি গানের একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের প্রতি সবসময় একটা টান অনুভব করতেই তিনি অনবদ্য একটি গান সৃষ্টি করেছেন দেশকে মিস করে তিনি লিখেছেন, ” আমার মন পইরা রয় বাংলাদেশের সবুজ শ্যামল গাঁয়” নিজের সুরে নিজেই গেয়েছেন তিনি এমন দরদমাখা গান।এই গানটি এটিএন বাংলা চ্যানেলে মাঝে মাঝে প্রচারিত হয়। প্রতিবছর তিনি দেশে আসেন মাতৃভূমির টানে।এখান এসে এখনো তিনি সংগীত নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান কখনো মঞ্চে কখনো টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রোগ্রাম করেন। ব্যক্তিগত জীবনে একজন আদর্শ স্বামী তিনি। স্ত্রী মীনা শোয়েব তাঁর পাশে সবসময় অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন সংগীত প্রেমী একজন মানুষ হিসেবে। সেই সঙ্গে তিনি সফল পিতা একজন। তাঁদের সুখী জীবনে দুটো সন্তান রয়েছে। পুত্র বিশিষ্ট গুণী সংগীতশিল্পী ” সাইফ শোয়েব ‘ দারুণ গান করেন।এবং কন্যা ‘ সার্লিন’ বিশিষ্ট ভায়োলিন বাদক।

তিনিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভায়োলিন বাজান ভালোবেসে শখেরবশে। ব্যক্তি এম এ শোয়েব মানুষ হিসেবে সবসময় সদাহাস্যজ্বল নির্মল ও সাদা মনের নির্হংকার একজন উদার মনের মানুষ তিনি। ভীষণ স্টাইলিশ রুচিশীল ব্যক্তিত্ব। প্রকৃতির ফুল, পাখি, সমুদ্র, পাহাড় খুব প্রিয়। শখের বশে ছবি তোলা দারুণ পছন্দ। বন্ধুসুলভ আচরণ নিয়ে তিনি ছোট বড় সবার মন জয় করে নেন। সংগীত তাঁর প্যাশন! ভালোবেসে এখনো নিয়মিত গান গেয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে সুরের আবেশে ভরিয়ে রাখেন। সবধরণের গান শুনতে তিনি পছন্দ করেন,তাঁর মতে গান ভালো হলেই হলো। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের গান নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নবীন কণ্ঠশিল্পীদের কাছে তিনি সবসময় সমাদৃত হবার মতো মডার্ণ গান রেখে গেছেন। Young generation may have to Google to find the pioneer of Bangla modern song M.A Shoeb of the 1980. এমন একজন গুণী মানুষকে নিয়ে লিখতে পেরে আমি গর্বিত! তবে এতো অল্পকথায় তাঁকে নিয়ে,তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লেখা সম্ভব নয়। তবুও তাঁর জন্মদিনের এই বিশেষ দিনটিতে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার এ লেখাটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। শুভ জন্মদিনের প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভকামনা রইল বরেণ্য গুণী শিল্পীকে,

সে সাথে প্রবাস হংকং থেকে বরেণ্য শিল্পীর শুভ জন্মদিনে  লায়ন দিদার সরদার এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি জানান – শুভ জন্মদিন প্রিয় ভাই বন্ধু, আপনার নীতি ভালবাসায় বেঁচে থাকেন হাজারো শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড়ে। সুন্দর এই ভুবনে সুন্দরতম জীবন হোক আপনার।জন্মদিনের শুভেচ্ছা অভিনন্দন রইল।

আইভি সাহা (কবি ও লেখক)
সম্পাদক সাহিত্য বিনোদন সময়ের কণ্ঠধ্বনি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com