হালকা সবুজ রঙের গোলাকার ছোট্ট একটি ফল। নামটিও বেশ সুন্দর ‘কিউই’। আজকাল সুপারশপ ছাড়া বাজারেও পাওয়া যায় কিউই ফল। শুধু দেখতে সুন্দর নয়, এর পুষ্টিগুণও নজরে পড়ার মতো। শাঁসালো সবুজ রঙের এই ফলটি টকজাতীয়। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য নানা উপাদানে ভরপুর কিউইকে সুপারফুডও বলে থাকেন। স্বাস্থ্যের বড় বড় সব রোগের সমাধান রয়েছে ছোট্ট এই ফলে।
আসুন জেনে নিন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই কিউই ফল স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী-
কিউই ফল নিয়মিত খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। এতে থাকা ভিটামিন-সি এবং পটাসিয়াম কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন এক থেকে দুটি করে কিউই ফল খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এতে হৃদরোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূর হয়।
ডায়েটারি ফাইবারের ভালো উৎস
যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তাদের জন্য উপকারী এই ফলটি। প্রচুর ফাইবারযুক্ত এই ফলটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে পারে। লিডস ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষা অনুসারে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ক্রমবর্ধমান হৃদরোগ (সিভিডি) এবং করোনারি হার্ট ডিজিজ (সিএইচডি) উভয়ের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। গবেষকদের মতে, উচ্চতর ফাইবারযুক্ত খাবারগুলো দীর্ঘক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে। এতে করে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণ ও ওজন হ্রাস করে। ডায়াবেটিস রোগীদেরকেও কিউই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে কিউই ফল। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কানাডিয়ান জার্নাল অব ফিজিওলজি অ্যান্ড ফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত হওয়া এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিউই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে এবং ঠাণ্ডা বা ফ্লু এর মতো অসুস্থতার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।
হজমশক্তি বাড়ায়
কিউই ফলে অ্যাক্টিনিডিন নামক এনজাইম থাকে। যা প্রোটিন-দ্রবীভূত বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। কিউইতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিউই দ্বিগুণ পরিমাণ হজমশক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমনকি পেট ফাঁপা ও বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
এই ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। যা ম্যাকুলার অবক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিউই ফলের মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন-এ এবং ফাইটোকেমিক্যাল চোখের ছানি এবং বয়সজনিত কারণে চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে।
হাড় ও দাঁত ভালো রাখে
কিউই ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি ৬, ১২, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম। এসব ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। এতে করে হাড় ও দাঁত ভালো থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য এক উপকারী ফল হলো কিউই। ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতিদিন তিনটি কিউই ফল খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এতে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ পদার্থগুলো রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এমনকি নিম্ন রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয় ছোট্ট এই ফলটি।
ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস
কিউই ফলের পুষ্টি বিভাজন অনুসারে, প্রতি ১০০ গ্রামে ১৫৪ শতাংশ ভিটামিন সি রয়েছে, যা লেবু এবং কমলার চেয়ে দ্বিগুণ! ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ফ্রি র্যাডিকেলগুলো দূর করে। আর এ কারণেই যে কোনো প্রদাহ বা ক্যানসার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অনিদ্রার সমাধান
কিউই ফলে রয়েছে অনিদ্রার সমাধান। এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিউই ফলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অনিদ্রার মতো ঘুমের ব্যাধিগুলো সারিয়ে তুলতে পারে।
সৌন্দর্য্য রক্ষাকারী
কিউই ফল রক্তের পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক রাখে। যা আপনাকে প্রাণবন্ত ও শক্তিতে ভরপুর করে তুলতে পারে। সেই সঙ্গে ত্বকের তারুণ্য ভাব ধরে রাখে। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং ই ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। যা ত্বকের ক্ষয় রোধ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।