তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ওটিটি প্লাটফর্মের সঙ্গে গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো সম্পর্ক নেই। মির্জা ফখরুল সাহেব না পড়ে, না বুঝে এটি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ‘সবজান্তা মাতব্বর’ বা ‘মিস্টার ওয়াইজ ক্র্যাকার’ এর মতো।’ রবিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে গণযোগাযোগ অধিদফতর আয়োজিত জেলা তথ্য অফিসার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমসাময়িক প্রসঙ্গে একথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব শনিবার দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্ট ভিত্তিক পরিষেবা দেওয়া এবং পরিচালনা নীতিমালা ২০২১ খসড়াকে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের পাঁয়তারা বলে বর্ণনা করেন। এর জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যেমন বলেছিলেন সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হলে দেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে, ফখরুল সাহেবের বক্তব্যটাও ঠিক সে রকম। যেমন নেত্রী, তেমন সচিব। উনি যেভাবে কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে যে, উনি পার্টির মহাসচিবের দায়িত্বের পাশাপাশি ভেতরে ভেতরে নাটক-সিনেমা নিয়েও বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি ওটিটি প্লাটফর্মকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন।’
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ওটিটি প্লাটফর্ম কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যম নয়, ওটিটি প্লাটফর্ম এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে নাটক-সিনেমা এবং এ ধরণের এন্টারটেইনমেন্ট কনটেন্ট আপলোড করা হয়। বাংলাদেশে চরকীসহ এ ধরণের কিছু প্লাটফর্ম আছে। অন্যান্য দেশেরও কিছু ওটিটি প্লাটফর্ম যেমন জি-ফাইভ, হৈচৈ এগুলো দেখা যায়।
ড. হাছান বলেন, এই প্লাটফর্মে এমন ধরণের কনটেন্ট আপলোড করা হচ্ছিল যেগুলো আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের পরিপন্থী, এমনকি কিছু ছিলো যা প্রায় পর্নোগ্রাফির কাছাকাছি। এগুলো নিয়ে ইতিপূর্বে বাংলাদেশে অনেক সমালোচনা হয়েছে, গণমাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে এবং গণমাধ্যমের অনেকেই এটি নিয়ে একটি নীতিমালা করার তাগিদ দিয়েছেন।
সর্বশেষে হাইকোর্ট একটি আদেশ দিয়েছে, যার প্রেক্ষিতে আমরা একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ওটিটি প্লাটফর্ম যাতে আরো বিকশিত হয় এবং একটি সুষ্ঠু নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, এটাই নীতিমালার উদ্দেশ্য। আমাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, মূল্যবোধের পরিপন্থী কোনো কিছু যাতে আপলোড না হয়, আমাদের সমাজকে যাতে বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, একইসাথে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে বা বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সেজন্যই এটি করা হচ্ছে। ওটিটি প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত স্টেক হোল্ডারবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়াটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ এসময় জেলা তথ্য অফিসারদেরকে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার নির্দেশনা দেন।
গণযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান উল আলম বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। মন্ত্রী এসময় তাদের নিয়ে তথ্য অফিসার মো. মামুন অর রশিদের ‘বাংলাদেশের জেলা তথ্য অফিসের একাল-সেকাল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।