বৃহস্পতিবার, ০৮:২৮ অপরাহ্ন, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে উপকূলীয় ১৪ জেলা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলায় গ্রেফতার ২৬ জনই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত : ডিএমপি রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলন চান ড. ইউনূস নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা সরকারি চাকরি পাবেন না : ক্রীড়া উপদেষ্টা ভারতে যেখানে আছেন শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নাজিরপুরে সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউলসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা পবিপ্রবিতে বিগত দিনের দুর্নীতি-অনিয়ম তদন্তে ৪৯ সদস্যের কমিশন গঠন ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বিপৎসীমার ওপরে কীর্তনখোলার পানি বরিশালে বিএনপির অফিস পোড়ানো মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক গ্রেপ্তার

ভর্তুকির লাগাম টানতে পারছে না সরকার

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৫৭ বার পঠিত

তড়িঘড়ি করে অস্বাভাবিকভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। পরে গত ১২ জানুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। এর ছয় দিন পর গত ১৮ জানুয়ারি বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। বাকি আছে পানির দাম, তা-ও বাড়ানোর উদ্যোগ আছে। এখানেই শেষ নয়। এখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে বলে বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানো হবে। তবে এভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও ভর্তুকি কমাতে পারছে না সরকার। কারণ বছর বছর বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েই চলছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাকার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধ করতে পারছে না। গ্যাস বিলও বকেয়া। সম্প্রতি গ্যাসের দাম বাড়ানোয় এখন পিডিবির ব্যয় বাড়বে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই অর্থসংকট কাটাতে বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। এসব আয়োজন মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)

অন্যতম শর্ত বাস্তবায়নের জন্য। আইএমএফের ঋণ পেতে সরকারকে এসব খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। এ জন্য আইএমএফের ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই সরকার কিছু শর্তপূরণ করা শুরু করে দিয়েছে। মূলত যেসব শর্তপূরণ করা সহজ, যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ায়, সেগুলোই সরকার দ্রুত করছে।

যদিও ভর্তুকি কমাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তবে বর্ধিত মূল্য থেকে কত টাকা আয় হতে পারে, বর্তমানে কতটা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বা ভর্তুকির চাপ কতটা কমতে পারে, সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির পর রাতে দেওয়া এক ব্যাখ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতিতে ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ ছাড়া, জ্বালানিসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়, যেমন বীমা খরচ, ঝুঁকি ব্যয়, ব্যাংক সুদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হওয়ায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্যও অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। একদিকে ভর্তুকি কমানোর কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ানো হচ্ছে ভর্তুকির পরিমাণ। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতেই ব্যয় বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের জন্য রক্ষিত ভর্তুকির মূল বরাদ্দের ৪০ শতাংশ বেশি। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে বাজেটের ১৫ ভাগ অর্থই ব্যয় করতে হবে শুধু ভর্তুকি খাতে।

ভর্তুকি খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে আগামীতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও খানিকটা খারাপ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বলা হয়েছে, ভর্তুকি কমাতে হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও সারের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

বাজেট সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির সর্বশেষ সভায় ভর্তুকির অতিরিক্ত চাপের বিষয় নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এই চাপ অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে পানির দামও।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে, ১৭ হাজার কোটি টাকা। গেল অর্থবছরে যা ছিল ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। চলতি বছরে এলএনজি (আমদানীকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) খাতে বরাদ্দ রয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরও একই পরিমাণ ছিল। খাদ্য খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৫ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা (গত বছর ৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা)। কৃষি খাতে ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা (গত বছর ১৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা)। টিসিবি ও অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রণোদনা (রপ্তানি ও রেমিট্যান্স) ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ১৩ হাজার ২শ কোটি টাকা) এবং নগদ ঋণ খাতে এবার ভর্তুকি রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, প্রতিবছরই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ভর্তুকি দেওয়া পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানো হলেও এর রাশ টানা যাচ্ছে না। যেমন- ২০২০-২১ র্অবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভর্তুকি ছিল ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com