বুধবার, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

পারমাণবিক সংঘাত অনিবার্য?

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২
  • ৮৩ বার পঠিত

ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর মাত্র চারদিনের মাথায় রুশ প্রেসিডেন্ট তার পারমাণবিক বাহিনীকে ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ ছিল। সম্প্রতি ভ্লাদিমির পুতিন তার ওই হুমকি নবায়ন করেছেন। রাশিয়ার হাতে থাকা সব ধরনের অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এরপর পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কায় বৈশ্বিক উদ্বেগ আরও বেড়েছে বহুগুণে। কারণ, পূর্ণমাত্রায় পারমাণবিক সংঘাতের মানে তো আরেকটি বিশ্বযুদ্ধে পতিত হবে পৃথিবী। বাস্তবে এমন সংঘাতের ঝুঁকি কতখানি, তা নিয়ে আমাদের সময় এর আগেও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সম্প্রতি আরও চার পশ্চিমা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এ নিয়ে ইমেইলে কথা বলেছেন এই লেখক।

যুদ্ধবিষয়ক ব্রিটিশ গবেষক অধ্যাপক ফ্রাংক লেডউইজ বলেছেন, পূর্ণমাত্রার পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা ‘অত্যন্ত কম’। নিরাপত্তাবিষয়ক ব্রিটিশ গবেষক ক্রিস্টোফ ব্লাথ বলেছেন, ‘আমার মতে, আশঙ্কা কম’। নিরাপত্তাবিষয়ক আরেক ব্রিটিশ গবেষক রবার্ট ডোভার মনে করছেন, এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’-এর চেয়েও জটিল। অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলেজান্দার মটিল বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, আমি বুঝতে পারছি না’।

ফ্রাংক লেডউইজ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের আইনের অধ্যাপক। পুরোদস্তুর পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা ক্ষীণ বলার পেছনে তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘অন্ততপক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে নেপথ্যের প্রধান পক্ষগুলোর অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্বগত স্বার্থ ঝুঁকির মধ্যে নেই। ইউরোপ বা আমেরিকার এমন যুদ্ধের জন্য কোনো রাজনৈতিক ক্ষুধা-তৃষ্ণা নেই। একইভাবে রাশিয়ায় অভিজাত শ্রেণি এই ধরনের যুদ্ধের চরম পরিণতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে।’
তবে এই ব্যারিস্টার বলেন, ‘রাশিয়া যদি ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করার চেষ্টা করে, তা হলে আমি বিশ্বাস করি, যুদ্ধ বাধতে পারে।’

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্র্যাডফোর্ডের অধ্যাপক ক্রিস্টোফ ব্লাথের যুক্তি হলো, ‘রাশিয়ার নেতারা জানেন, পূর্ণমাত্রার একটি পারমাণবিক সংঘাতের কী মানে। তাদের অজানা নয় যে, এমন সংঘাত বাধলে তাদের দেশ চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ জন্য আমি বলব, এমন সংঘাত বাধার আশঙ্কা কমই।’

তবে ইউনিভার্সিটি অব হালের অধ্যাপক রবার্ট ডোভার কিছুটা জটিল চিন্তায় আছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে পারমাণবিক সংঘাত বাধবে কিনা, এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’-এর চেয়েও জটিল। রাশিয়ার কারণে আমরা এমন সংঘাতের দিকে এগুচ্ছি, এতে সন্দেহ নেই। তারা আগে থেকেই ঝুঁকিতে ফেলেছে। এখন আমরা ঝুঁকির সর্বোচ্চ সীমার কাছে গিয়ে পড়েছি। তারা ইউক্রেনে বেসামরিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার ধরন। প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে তাদের আরও গভীর চিন্তাভাবনা করা উচিত। একে অপরকে নির্মূল করার জন্য ভয়ঙ্করভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলে তাত্ত্বিকভাবে পারস্পরিক ধ্বংস অনিবার্য। অবশ্যই পরস্পরকে ধ্বংস করার এই গোঁড়ামি চিন্তা শেষমেশ ধ্বংসের ঝুঁকিকে বাস্তব করে তুলবে। বর্তমানে এমন আশঙ্কা বড় হচ্ছে। যদিও এমন সংঘাত বাধতে বা এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পথ বেশ বাকি। কিন্তু এখন বিপজ্জনক মুহূর্ত।’

ব্যারিস্টার ফ্রাংক লেডউইজ বলেছেন, “পুতিন প্রথমত চেয়েছিলেন, ইউক্রেন যেন পশ্চিমাদের প্রভাবে কিংবা ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান ইউরোপের প্রভাববলয়ে আটকা না পড়ে। এ ছাড়া, ‘হারানো’ রুশ ভূখণ্ড, যেমন ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের পণও ছিল পুতিনের।”

যুদ্ধ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও যেহেতু এসব লক্ষ্য এখনো পুরোপুরি অর্জন করা রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়নি, এ জন্য ড. লেডউইজ মন্তব্য করেছেন, ‘অনেকগুলো প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে যে কোনো যুদ্ধের গতিপথ। সব যুদ্ধেরই নিজস্ব একটা ধারা থাকে। বিশেষ করে এই ধরনের বহুমাত্রিক ও জটিল যুদ্ধের ক্ষেত্রে কথাটা প্রযোজ্য। এই যুদ্ধের জল কতদূর গড়াবে, তা নিয়ে প্রচুর জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। কিন্তু আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলব, বাস্তবে কী হবে আমি জানি না।’

সীমান্তের কাছে ন্যাটোর সম্ভাব্য সম্প্রাসরণের রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকি পড়েছে, এমন দাবি তুলে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com