ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ১৩ বছরে মোট কত টাকা বেতন, উৎসাহ ভাতা, আনুষঙ্গিক সুবিধা নিয়েছেন, সেই হিসাব দাখিল করতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ওয়াসার আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি বোরহান উদ্দিন এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ১৩ বছরে মোট বেতন, উৎসাহ ভাতা, আনুষঙ্গিক সুবিধা হিসেবে যত টাকা নিয়েছেন তার হিসাব তলব করেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডকে এ হিসাব আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সেই সাথে তাকসিম এ খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তাকে অপসারণে বিবাদীদের ‘নিষ্ক্রীয়তা’ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এছাড়া যতদিন পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা না হবে ততদিন ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী তার বেতন নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতেও রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ নির্দেশ দেন আদালত।
স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে ক্যাবের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, গত ১৩ বছর ওয়াসা বোর্ড বিভিন্ন রেজুলেশনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কী পরিমাণ বেতন-ভাতা এবং টিএ-ডিএসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তার হিসাব আগামী ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে বিভাগে দাখিলের জন্য আবেদন করেছিলাম। আদালত তা অনুমোদন করেছেন।
গতবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমডির বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মূল বেতন দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া ৩৫ হাজার, চিকিৎসা ও আপ্যায়ন ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা, বিশেষ ভাতা এক লাখ ৮০ হাজার ৬৬ টাকা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা চার হাজার ৭৬৭ টাকা। তার উৎসব ভাতা ঠিক হয় ৪৭ হাজার ৬৬৭ টাকা।
এ খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে গত ২০ মার্চ বিবাদীদের উকিল নোটিশ দেয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। নোটিসের জবাব না পাওয়ায় গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টে রিট করা হয়।
এদিকে দেশের ব্যাংকগুলোতে তাকসিম এ খানের কত টাকা আছে, কী পরিমাণ লেনদেন হয়েছে, সেসব তথ্য জানতে চেয়ে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ- বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর চার দফায় বাড়ানো মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর। তার সপ্তাহ দুয়েক আগে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তাকসিমের মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ায় সরকার।