শনিবার, ১০:০২ অপরাহ্ন, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

দেশের শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার করুণ দশা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১০৪ বার পঠিত

দেশে শিশু হৃদরোগ চিকিৎসাব্যবস্থা রুগ্ণ রূপধারণ করেছে। দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হৃদরোগ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) চিকিৎসাধীন শিশু রোগীদের ৮ শতাংশই মারা যাচ্ছে; যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হারের (৫ শতাংশ) তুলনায় বেশি। এ তো গেল রাজধানীর চিত্র। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া আর কোনো সরকারি হাসপাতালে নেই পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজির পদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় দেশে তৈরি হচ্ছে না কোনো পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন। এভাবে চলতে থাকলে দেশে কিছুদিন পরে বন্ধ হয়ে যাবে শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসা।

জানা গেছে, ২০২১ সালে এনআইসিভিডির শিশু হৃদরোগ বিভাগে ১৩৯৯ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৮০০ জন ছেলে এবং ৪৮২ জন মেয়ে। এদের মধ্যে মারা গেছে ১১৭ জন। ইনস্টিটিউটের শিশু হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগে নেই কোনো আইসিইউ। হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ভুল নকশার কারনে নবনির্মিত পাঁচতলা ভবনে আইসিইউ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আইসিইউ ও এইচডিইউ চিকিৎসকদের জীবাণুমুক্ত হয়ে স্ক্রাপিং করার ব্যবস্থা সেখানে রাখা হয়নি।

ভর্তি রোগীদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও অপ্রতুল। শিশু হৃদরোগ বিভাগের জন্য চিহ্নিত ও বরাদ্দকৃত রুমগুলো দখল করে রেখেছেন অন্য বিভাগের চিকিৎসকরা। এতে শিশুদের স্বাভাবিক চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এনআইসিভিডি সূত্র জানায়, হৃদরোগ চিকিৎসায় একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হলেও এখানে মাত্র দুজন সহকারী অধ্যাপক এবং ৫ জন মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন। অথচ এ প্রতিষ্ঠানে মাসে ৩০ থেকে ৩২টি সার্জারি হয়। বেসরকারি পর্যায়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ নেই। হৃদরোগ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান জানান, আর মাত্র চার মাস পরে তিনি অবসরে যাচ্ছেন। পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারির কোনো পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্স না থাকায় নতুন করে কার্ডিয়াক সার্জন গড়ে উঠছে না।

এনআইসিভিডির শিশু হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে শিশু হৃদরোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে।’

অন্যদিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনিয়মিতভাবে শিশু-কিশোর হৃদরোগীদের অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে এখানেও পেডিয়াট্রিক কার্ডিলজি বিভাগ নেই। শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের পদ থাকলেও নেই কোনো সার্জনের পদায়ন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে একজন শিশু কার্ডিওলজিস্ট আছেন; যিনি ইকো কার্ডিওগ্রাফি করে রোগ শনাক্ত করে থাকেন।

এমন পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। এবারে দিবসটির তিন প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ওয়াল্ড হার্ট ফোডারেশন। এগুলো হলো- মানবতার জন্য, প্রকৃতির জন্য এবং নিজের জন্য হার্ট ব্যবহার করতে হবে। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের তথ্য বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ৭৫ শতাংশই ঘটে মধ্য ও নিম্নআয়ের দেশেগুলোতে। এ ছাড়া ২৫ শতাংশ হৃদরোগে মৃত্যুর কারণ পরিবেশদূষণ। এনআইসিভিডির কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহসিন আহমেদ বলেন, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে নিজেকে চাপ মুক্ত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে অব্যশই প্রতিদিন নিজেকে অন্তত এক ঘণ্টা সময় দিতে হবে। মনের প্রশান্তির জন্য এ সময়ে গান শুনে, বই পড়ে, সিনেমা দেখে বা ধর্মীয় কাজ করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়মিত হাঁটার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com