শুক্রবার, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনে ফিরে যাচ্ছে ভারতীয় যে ছাত্ররা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩
  • ৬২ বার পঠিত

যুদ্ধের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা নিয়েই মেডিক্যালে পড়তে গত শরৎকালে ইউক্রেনে ফিরে গেছেন ঋষি দ্বিভেদি।

দ্বিভেদি বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলার আগেই সাইরেন বাজিয় সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে আমাদের। দিনে অন্তত চার বার এভাবে সাইরেন বাজাচ্ছে’।

মেডিক্যালে পঞ্চম বর্ষের ওই ছাত্র উত্তর প্রদেশের কনৌজ শহরের আদি বাসিন্দা। ইউক্রেনের লাভিভ জাতীয় চিকিৎসাবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন ও সার্জারিতে স্নাতক কোর্স করছেন তিনি।

তার মতো আরো কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল রাশিয়া হামলা শুরুতেই। কিন্তু তিনি গত অক্টোবরে কোর্স শেষ করার জন্য ফিরে গেছেন।

ফিরে যাওয়া ছাড়া বিশেষ রাস্তা নেই

যুদ্ধের শুরুতেই ২২ বছর বয়সী এক মেডিক্যাল ছাত্র গোলার আঘাতে মারা যাওয়ার পরে ১৮ হাজার ছাত্রছাত্রীসহ মোট ২৩ হাজার ভারতীয়কে সরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের নির্দেশিকা উপেক্ষা করেই ওই ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ফিরে গেছেন ইউক্রেনে।

তারা বলছে, ডাক্তার হিসেবে কাজ করতে গেলে তাদের সামনে এ ছাড়া আর বিশেষ রাস্তা নেই।

দ্বিভেদির মতো এক হাজার ১০০ ছাত্র ইউক্রেনে বাস করছে এখন। বেশিরভাগই লাভিভ, উজগোরোদ আর তেরনোপিলের মতো পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতে রয়েছে। ওই অঞ্চলে রাশিয়ান বিমান হামলা হতে পারে, কিন্তু শহরগুলো থেকে পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গন অনেক দূরে।

তবে শুধু যে এই ভারতীয়রাই ইউক্রেনে ফিরে গেছে তা নয়। বিবিসি দেখা পেয়েছে কিছু আফ্রিকান ছাত্রছাত্রীরও, যারা লাভিভে রয়েছে। অন্যরাও ভাবছেন যে তারা কী করবেন।

লাভিভ শহরে চতুর্থ বর্ষের মেডিক্যাল ছাত্রী সৃষ্টি মোজেস বলেন, ‘আমরা জানি না যে আমাদের কোর্স শেষ করতে পারব কি না। মাথার ওপর দিয়ে যখন হেলিকপ্টার বা বিমান যাতায়াত করে, তখন আমরা ঘুমাতে পারি না। সব সময়ে চিন্তা করি, কখন বুঝি হামলা শুরু হয়।’

তিনি যেখানে থাকতেন, সেখানে মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ থাকত না। তাই নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে এ রকম একটা উচ্চবিত্ত এলাকায় ফ্ল্যাট নিতে হয়েছে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় দেরাদুন শহরের মূল বাসিন্দা মিজ মোজেসকে।

কেন ফিরতে হল ইউক্রেনে?

এই পরিস্থিতিতে কেন ছাত্রছাত্রীরা ইউক্রেনে ফিরে গেলেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে পড়াশোনা করে এমন বেশিরভাগ মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীই স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু তার জন্য জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের কাছ থেকে তাদের অনুমতি নিতে হয়। ওই কমিশনই ভারতে মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে যখন বাধ্য হয়ে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা বন্ধ করে চলে এলো, তখন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তাদের চিকিৎসক করে তোলার জন্য যা যা দরকার তা করা হবে।’

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ভারতের কলেজগুলোতে এদের ভর্তি করে নিতে অনুরোধ করেছিল, রাজ্য সরকারগুলোও একই আবেদন করেছিল।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুরোধ করেছিল যে এককালীন ব্যবস্থা হিসেবে ফিরে আসা ছাত্রছাত্রীদের যেন ভারতের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি করে নেয়া হয়।

কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একদম বিপরীত সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জুলাই মাসে জানিয়ে দেয় যে বিদেশের মেডিক্যাল কলেজ থেকে ভারতীয় মেডিক্যাল কলেজে বদলি নিয়ে আসার কোনো নিয়ম নেই।

আবার ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা অনেক ছাত্রছাত্রী ভারতের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতেও চায়নি। ভারতে ভর্তি হওয়ার জন্য এক তো কঠিন প্রতিযোগিতা আছে আর খরচও খুব বেশি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ফলে ফিরতে হল ছাত্রদের

তেরনোপিল জাতীয় মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বৈশালি সেঠিয়া ইউক্রেন থেকে হাঙ্গেরি হয়ে চলে এসেছিলেন গত বছর মার্চ মাসে। তিনি নভেম্বরে ফিরে গেছেন।

দিল্লি লাগোয়া গাজিয়াবাদের বাসিন্দা সেঠিয়া বলেন, ‘জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্দেশ দিয়েছে যে ২০২১ সালের নভেম্বরের পরে যারা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছেন তাদের ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পাশ করে আসতে হবে। এ ছাড়া তাদের ডিগ্রি ভারতে গ্রাহ্য হবে না।’

যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মাস আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিনি ইউক্রেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘সবাই জিজ্ঞাসা করছে কেন ইউক্রেনে ফিরছি।’

ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত মাসে জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় ইউক্রেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত এমন তিন হাজার ৯৬৪ জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে ইউক্রেনের বাইরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রায় ১৭০ জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ইউক্রেনের মধ্যেই নিরাপদ জায়গায় সরে গেছে এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছে, যেসব ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে মেডিক্যাল কোর্স শেষ করেছেন, তারা বিদেশী মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষায় বসতে পারবেন।

বিদেশ থেকে মেডিক্যাল পড়ে ভারতে এসে প্র্যাক্টিস শুরু করতে হলে ওই পরীক্ষায় পাশ করতে হয়।

কী করণীয় বুঝতে পারছে না অনেকে

যে সব ছাত্রছাত্রী ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে ফিরে গেছে, তাদের তো থাকতেই হবে সেখানে। আর যারা এখনো যায়নি, তারা বুঝে উঠতে পারছেন না যে কী করণীয় তাদের।

বিহারের বাসিন্দা দিপক কুমার ইউক্রেনে ফিরে গিয়ে পড়াশোনা শুরু করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিবারের চাপে তিনি যেতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার আপত্তি করছে কারণ তারা আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।’

তিনি চেষ্টা করলে ভারতের কোনো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারতেন, কিন্তু তার খরচ অত্যাধিক বেশি।

তিনি জানান, ‘ইউক্রেনে পড়ার খরচ যোগানোর অর্থই ছিল না আমাদের কাছে। আমার বাবাকে পড়ার খরচ দিতে গিয়ে বেশ কিছু জমি বিক্রি করতে হয়েছে।’

পড়ার খরচ কম

বিবিসি যত ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বলেছে, তারা জানায় ইউক্রেনে পুরো কোর্স শেষ করতে যা খরচ হয়, তা ভারতের কোনো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের খরচের অর্ধকেরও কম।

ইউক্রেনের লেভিভে ফিরে গেছে এমন এক ছাত্র শশাঙ্কের বাবা মৃত্যুঞ্জয় কুমার বলেন, ‘ভারতের বেসরকারি কলেজগুলো যেখানে ৭০ লাখ ভারতীয় টাকারও বেশি নেয়, সেখানে ইউক্রেনে লাগে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মতো।’

লেভিভে বসবাসরত ঋষি দ্বিভেদি বলেন, ‘এখন তাদের দিকে বিশেষ কেউ নজর করে না। আমরা ফিরে আসার মাসখানেক পর অবধিও আমাদের নিয়ে চর্চা হতো।’

ঋষি দ্বিভেদি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিভাবকদের বলে দিয়েছি যে যুদ্ধ যদি আবার বেশি শুরু হয়, আর আমাদের যদি পালাতে হয়, তবে আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা করে নেব। কাছাকাছি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে নেব।’

সূত্র: বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com