বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭০০ জনের বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার রাতে এ মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে ২০৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরো ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় চট্টগ্রামের চার সাংবাদিক, সাবেক দুই ওসিসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ রেহেনা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, দিলীপ কুমার আগরওয়াল, খাগড়াছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সিটি করপোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি নূরে আলম মিনা, সিএমপির সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ মহসিন, পাঁচলাইশ থানার সাবেক ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া, খাগড়াছড়ির সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মং শৈ প্রু।
আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সময় টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কমল দে, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক ও একুশে টিভির সাবেক আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহারকে। এছাড়াও মামলায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় তরুয়া অংশ নেন। আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসামিদের অনেকে হামলায় যোগ দেন। ১৮ জুলাই নগরের চান্দগাঁও এলাকায় গুলিতে আহত হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হৃদয়কে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় ২৩ জুলাই মারা যান তিনি।
বাদী আজিজুল হক (হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার বন্ধু) মামলায় উল্লেখ করেছেন, ১ থেকে ৪০ নম্বর আসামিদের নির্দেশনা, অর্থায়ন ও প্ররোচনায় সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন আন্দোলনকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেন। এরপর ৪১ থেকে ২০৬ নম্বর এবং অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জন হামলা চালিয়ে অস্ত্রসহ আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই চান্দগাঁও এলাকায় সংঘর্ষের সময় হৃদয় চন্দ্র তরুয়া গুলিবিদ্ধ হন এবং ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। রতন চন্দ্র তরুয়া ও অর্থনা রানী দম্পতির ছেলে।
সূত্র : বাসস