রবিবার, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

এক যুগ ধরে শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন জাবেদ আলী

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩
  • ৬৪ বার পঠিত

দীর্ঘ এক যুগ ধরে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেন। সময়মতো নিয়ে আসেন ক্যাম্পাসে। এক যুগের এ পথচলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেন আত্মার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরাই তার সন্তানের মতো। তারা বাসে উঠলেই তার মন ভরে যায়। বলছিলাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাসচালক জাবেদ আলীর কথা।

তিনি ২০১১ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসচালক। দীর্ঘ এক যুগ থেকে শুধু শিক্ষার্থীদেরই বহন করছেন। এই কাজ করতে গিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের স্নেহ করেন। শিক্ষার্থীরাও তাকে সম্মান করেন। এতেই তিনি খুঁজে পান সুখ।

জাবেদ আলী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও প্রথম শিক্ষার্থীদের জন্য বড় বাসের বরাদ্দ হয় ২০১১ সালে। আমিও ওই সময় জয়েন করি। অন্য কেউ বড় বাস না চালালেও আমার ভাগে আসে শিক্ষার্থীদের বড় বাসটি। তখন একটি বাস নিয়েই শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া-আসা করতাম। এখন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাসের সংখ্যাও।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেক সম্মান করে যা এক ধরনের ভালোলাগা তৈরি করে। গাড়িতে যাওয়া-আসা ছাড়াও কোথাও দেখা হলে সালাম দিয়ে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওঠা-নামার জন্য বললে তাদের নিয়ে আসা বা নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। এভাবেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গাড়িতে যাতায়াত করা ছেলে-মেয়েরা এখন অনেক বড় বড় জায়গায় চাকরি করেন। দীর্ঘ দিন না দেখার ফলে আমি অনেকেরই চেহারা ভুলে গেছি। হঠাৎ করে কেউ ক্যাম্পাসে এলে কিংবা কোথাও কারও সঙ্গে দেখা হলে তারা সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।

মিশুক স্বভাবের হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও গাড়িচালক জাবেদ আলীকে পছন্দ করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জাবেদ মামা ভালো মনের মানুষ। নিয়মিত তার গাড়িতেই যাতায়াত করি। কোথাও নামতে চাইলে তিনি কখনোই বিরক্ত হন না।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেন, জাবেদ মামা দেখেশুনে গাড়ি চালান। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের দিকেই নজর দেন। যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়া করেন। মানুষের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলেন।

বাসচালক জাবেদ আলীর বাসা রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবা গাড়ির চালক হওয়ায় অল্প বয়সেই নিজেই গাড়ি চালানো শিখে ফেলেন। এরপর রংপুরসহ আশেপাশের জেলায় ট্রাক ও গণপরিবহন বাস চালিয়েছেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়ি চালনার সুযোগ হওয়ায় ক্যাম্পাসের গাড়িই চালান। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।

নিজে বেশিদূর পড়তে না পারলেও নিজের সন্তানদেরও এই ক্যাম্পাসে পড়ানোর ইচ্ছা ছিল জানিয়ে বলেন, পারিবারিক কারণে নিজে তেমন একটা পড়াশোনা করতে পারি নাই। তবে মেয়েদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তিনজন মেয়ের কেউই এ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে না পারায় ভর্তি হতে পারে নাই। পরে তাদের বিয়ে দিয়ে দিই। আর দুই ছেলে আছে তাদের আলেম বানানোর উদ্দেশ্যে মাদ্রাসায় ভর্তি করালেও তারাও পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি। ছেলেরাও এখন গাড়ি চালায়।

বেরোবি পরিবহন কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনু বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষ গাড়ি চালকদের মধ্যে জাবেদ আলী একজন। তিনি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বাস চালাচ্ছেন। সিনিয়র ও ব্যবহার ভালো হওয়ায় অন্য গাড়িচালকরাও তাকে পছন্দ করেন।

এছাড়া তিনি গাড়ি চালকদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ ক্যাম্পাসে গাড়ি চালাচ্ছি কিন্তু আমাদের প্রমোশন হচ্ছে না। ১২ বছরের বেশি সময় ধরে গাড়ি চালিয়ে মাত্র একবার পদোন্নতি হয়েছে। আমদের দাবি চাকরির বয়স ও বিধি অনুসারে আমাদের অন্যান্য পদোন্নতিগুলোও দেওয়া হোক।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com