অন্তর্বতীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘আইন যদি আমরা নিজের হাতে তুলে নেই তাহলে হবে? দেশে ল’ আছে, আইন আছে, বিচার আছে। আমরা সেদিকেই ধাবিত হতে চাই। মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা বা হামলা করার এ কালচার আমরা পরিবর্তন করতে চাই।’
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীতে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এদিন সকালে ধর্ম উপদেষ্টা রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদরাসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলীতে যান। সেখানে গৌরাঙ্গ বাড়ি মন্দির ও দুর্গা মন্দির পরিদর্শন করেন। পরে তিনি দরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন বলেন, ‘আমারা চেষ্টা করে যাচ্ছি, ল’ অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশনকে রিস্টোর করা। সমস্ত পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা চাই আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, জোর করে কাউকে পদত্যাগ করানো যাবে না। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা যাবে না। এটা গর্হিত কাজ; ন্যায় ও ইনসাফের পরিপন্থী। যারা এগুলো করছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। তারা এ জন্য দোষী। আমরা তাদের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার নিশ্চিয়তা দিচ্ছি। কারণ তা না হলে দেশে তো আর আইনশৃঙ্খলা থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘তারপরও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। একটা বিপ্লবোত্তর সময়ে এরকম একটা বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নতা হয়ে থাকে। পৃথিবীর যে সমস্ত জায়গায় বিপ্লব হয়েছে সেসব জায়গায়ও এমন হয়েছে। তবে আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালাচ্ছি। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এসব সংস্কার করতে কত দিন লাগবে তার আগাম মন্তব্য করা কঠিন। তবে সময়ই বলে দেবে কত দিন আছি।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সরকার পলিটিক্যাল কালচার ডেভেলপমেন্ট করতে চায়। আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী দু’বারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। কারণ আজীবন ক্ষমতায় থাকার বাসনা স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয়। আমেরিকায় নেই, ব্রিটেনে মেয়াদ পূর্তি হওয়ার আগেই চলে যায়। অথচ স্বাধীনতার পর থেকেই দেখছি, আমাদের এখানে একবার কেউ ক্ষমতায় বসলে ছাড়ার মানসিকতা থাকে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কমিশনকে পুনর্গঠিত করে নির্বাচন ও নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেবো, যেন প্রতিটি মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। জনগণের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেব।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আসন্ন দুর্গাপূজায় কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। আর নাশকতার আশঙ্কাও করি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাথে আমার কথা হয়েছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়েই হিন্দুধর্মীয় ভাই-বোনরা দুর্গোৎসব পালন করতে পারবেন। এবার মাদরাসা ছাত্ররাও মণ্ডপ পাহারা দেবে।’
এদিকে মন্দির পরিদর্শন ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে ধর্ম উপদেষ্টার সাথে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত, মদিনাতুল ইসলামী কওমী মাদরাসার প্রধান পরিচালক মাওলানা মোখতার আলী ও গৌরাঙ্গ বাড়ি দেব মন্দিরের সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।