বৃহস্পতিবার, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

৬ মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ল আড়াই হাজার কোটি টাকা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৪ বার পঠিত

যত দিন যাচ্ছে, দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণের বোঝা ততই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। ফলে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ভীষণ উদ্বেগের বিষয় হলো- বর্তমানে এ খাতের ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৫০ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় রয়েছে। একদিকে গ্রাহকরা আমানত ফেরত পাচ্ছেন না, অন্যদিকে নতুন ঋণ বিতরণও বন্ধপ্রায়। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা ৯টি প্রতিষ্ঠানকে এক মাস আগে অবসায়নের (লিকুইডেশন) সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেই প্রক্রিয়া খুব এগোয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিস্থিতি হঠাৎ করেই হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদারকি এবং পরিকল্পিত লুটপাটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক ও তাদের ঘনিষ্ঠরা ঋণের নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। দ্রুত কার্যকর সংস্কারমূলক পদক্ষেপ না নিলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া দূরের কথা, গোটা আর্থিক খাতই ধ্বংসের মুখে পড়বে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে উদ্দেশ্যে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারেনি। উল্টো নানা অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে এ খাত থেকেও বিপুল অর্থ তছরুপ হয়েছে। তাই অনিয়মে জড়িত ও অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক্সিট পলিসির আওতায় এনে দ্রুত বন্ধ করে দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৭৭ হাজার ৯২ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ২৭ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে এ খাতে ঋণ স্থিতি ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছিল ২৫ হাজার ৭৯ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। সেই হিসাবে ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। জানা গেছে, বিগত সময়ে পুনঃতফসিল আর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ খাতেও খেলাপির প্রকৃত চিত্র আড়াল রাখা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারিতে চেপে রাখা খেলাপি ঋণ এখন প্রকাশ পাচ্ছে। আর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি গ্রাহকের আস্থা মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে। অনেক আমানতকারী এখন আর টাকা তুলতে পারছেন না।

দেশে বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে ২২টি দেশি মালিকানাধীন। ১৩টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, উচ্চ খেলাপি ঋণ ও টাকা ফেরত দিতে না পারা ২০টি প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত মাসে নোটিশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদের বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এতে সায় এসেছে। এগুলো হলো- এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, আভিভা ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স ও প্রাইম ফাইন্যান্স। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৮০ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশের ঘরে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. শাহরিয়ার সিদ্দিকী আমাদের সময়কে বলেন, আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় এগুলোকে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এটা এখনও পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। সরকার থেকে টাকা পাওয়ার পর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তিনি বলেন, যা কিছু হবে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করেই হবে।

ঝুঁকির মধ্যে থাকা অন্য ১১টি প্রতিষ্ঠান হলো- সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হাজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থা নতুন নয়। আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি পিকে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, পুরো খাত এখন তার জের টানছে। পিকে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সর্বাধিক। পাশাপাশি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ কারণে সার্বিকভাবে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com