বৃহস্পতিবার, ০৬:১৮ অপরাহ্ন, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

৭২ ঘণ্টাও জ্ঞান ফেরেনি সায়েমের, মামুনের খুলির ঠাঁই ফ্রিজে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

মুখে অক্সিজেন মাস্ক, মাথায় মোটা ব্যান্ডেজ। পাশে মনিটরের টুকটাক শব্দ। হাসপাতালের নিঃসঙ্গ শয্যায় নিথর পড়ে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। গত রবিবার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যকার ঘটে যাওয়া এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। মাথায় পড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত।

চিকিৎসকরা তার মাথায় জরুরি অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর কেটে গেছে তিন দিন তথা ৭২ ঘণ্টার কাছাকাছি সময়। তবুও চোখ মেলেনি সায়েম। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গত রবিবার দুপুরে সংঘাত শুরু হওয়ার ঠিক আগে পরিবারের সঙ্গে শেষবার কথা বলেন সায়েম। ফোনে বাবাকে তিনি জানান, একজন আহত বন্ধুকে হাসপাতালে নিতে যাচ্ছেন। মায়ের সঙ্গেও কথা হয় ভিডিও কলে।

তার বাবা মোহাম্মদ আমির হোসেন, যিনি ছেলের খবর শুনে বগুড়া থেকে ছুটে এসেছেন চট্টগ্রামে। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘ওকে নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, মারামারিতে যাস না। কিন্তু সে বলল, আহত বন্ধুদের হাসপাতালে নিতে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর শুনি আমার ছেলেকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে সন্ত্রাসীরা। মানুষ কিভাবে পারে একজনকে এভাবে কোপাতে?’

ফ্রিজে সংরক্ষিত মামুনের খুলি:

সায়েমের সঙ্গে একই সংঘাতে আহত হয়েছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া। তার মাথার খুলি ফেটে গেলে, অস্ত্রোপচারে খুলির একটি অংশ ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তবে মামুনের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে।

তার বড় ভাই টাঙ্গাইলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘মামুন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে।’ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আজ তাকে কেবিনে নেওয়া হতে পারে।

চিকিৎসকের ভাষ্যে সায়েম-মামুনের বর্তমান অবস্থা:

পার্কভিউ হাসপাতালের স্পেশালাইজড ইউনিটের ইনচার্জ ডা. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, সায়েমের মাথায় ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত ছিল। খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালী ছিঁড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি। শুধু ব্লাড প্রেসারে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। রোগীর অবস্থা খুব বেশি উন্নত নয়।

মামুনের বিষয়ে তিনি জানান, তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খুলি ফ্রিজে রাখা হয়েছে। যদি সুস্থ থাকে, দুই থেকে আড়াই মাস পর তা পুনঃস্থাপন করা হবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি ঘটনা থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। একজন ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তার গায়ে হাত তোলেন। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন এবং তা গ্রামবাসীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ আহত হন প্রায় ৫০০ জন। এখনো তিন শিক্ষার্থী মৃত্যু সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া সংঘাত যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা বুঝিয়ে দিয়েছে সায়েম ও মামুনের রক্তাক্ত গল্প। পরিবার, চিকিৎসক ও সহপাঠীরা এখন শুধু অপেক্ষা, দুজনেই সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক ২১ একরের চবি ক্যাম্পাসে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com