২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।
এদিন বেলা ১১টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূত আন্দোলনের মধ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনে নতুন আশা, আবারও সৃষ্টি হয় এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের।’
ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তুলার লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল প্রফেসর ইউনূস ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেন।’
বিএনপি এই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায় উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে তা পালনের মধ্যদিয়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের কাজ শুরু হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সত্যিকারের প্রগতিশীল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের প্রক্রিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘ বিএনপি যে সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সব স্তরের জনগণ এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে তাদের জানাচ্ছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।’
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের বৈঠকে নির্বাচনের সময় ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারণের ঘোষণাকে স্বাগত জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে এই ঐতিহাসিক ঘোষণা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে এবং গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে।’
বিএনপি আরও মনে করে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নির্বাচনকে সফল করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং একটি কার্যকরী জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্রের এই সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, যারা আহত হয়েছে তাদের প্রতি সহানুভূতি এবং আরোগ্যের জন্য পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শহীদ পরিবারের পূর্ণবাসন ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘ আট বৎসর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারেক রহমানকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। বিগত এক বছরে অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের পথকে সুগম করার উদ্যোগের ও প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. ইউনূস, উপদেষ্টামন্ডলীর, সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সব সদস্যকে যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং প্রত্যাশা করছে অতি দ্রুত রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হবে।’