মঙ্গলবার, ০৭:৫১ অপরাহ্ন, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

৮৪ পুলিশ কর্তা গ্রেপ্তারের তালিকায়

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

পুলিশ বাহিনীতে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কাজে মন বসাতে পারছেন না পুলিশ কর্তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় ঢাকাসহ সারা দেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মী ও আমলাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশের সাবেক আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবলদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। সাবেক আইজিপিসহ ৩৩ জন পুলিশকর্তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ও নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের কেউ কেউ দেশের বাইরে আছেন। কেউ আছেন আত্মগোপনে অথবা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে। ২০২ জনের মতো পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন।

সম্প্রতি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ অনলাইনে সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশকে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ৮৪ জন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকাটির বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনুমতি নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকায় সাবেক আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার ও ইন্সপেক্টর রয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে। পলাতক কর্তাদের ধরতে নোটিশ যাচ্ছে পুলিশের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলে।

সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার আমলের পুলিশ তছনছ হয়ে গেছে। নতুন করে সাজানো হচ্ছে পুলিশ বাহিনীকে। বিভিন্ন ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো গতি আসেনি। কাজের গতি বাড়াতে সচেষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবলদের অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যাসহ নানা অভিযোগে মামলা হয়েছে। যারা কর্মস্থলে উপস্থিত হননি তাদের তালিকা করা হয়েছে। বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের নির্দিষ্ট সময় পর বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেশ কিছু কর্মকর্তা দেশের বাইরে চলে গেছেন। এখন পর্যন্ত সাবেক দুই আইজিপিসহ ৩৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিরোধে কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তার বিবরণ দিয়েছেন তারা। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা করেছেন সে তথ্যও দিয়েছেন আটক পুলিশ কর্মকর্তারা।

সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে, পলাতক ও অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আন্দোলনের সময় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছেন এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে। পুলিশ সদর দপ্তর চূড়ান্ত একটি তালিকা করেছে, যাতে ৮৪ জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আছেন আত্মগোপনে, কেউ আছেন দেশের বাইরে আবার কেউ দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে।

পুলিশ সূত্র জানায়, এর অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে নীলফামারীর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আটক করে হেফাজতে নিয়েছে। রাজশাহী সারদা একাডেমিতে সংযুক্ত থাকা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোল‍্যা নজরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শহিদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রংপুর রেঞ্জের সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাতকে আটক করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। গ্রেপ্তার ডিআইজি মোল‍্যা নজরুল ইসলাম গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে খুন-গুমসহ অনৈতিক শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল। ২৭ ব্যাচের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বাগেরহাটের এসপি থাকাকালে ২০২৪ সালের নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। এসপি আব্দুল মান্নান কুমিল্লা ও সিলেটে দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শক্তি প্রয়োগ করেন। সিটিটিসিতে পুলিশ সুপার থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজানোর একাধিক অভিযোগ আছে। আসাদুজ্জামান নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। নির্বাচন ও পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শক্তি প্রয়োগ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি ব্যাপক সমালোচিত। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত রাখা হয়। পুলিশের পেশাদারিত্ব ধ্বংসের জন্য বিশেষ কয়েকটি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ও রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তারাই দায়ী। তারা পুলিশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে বসে পুলিশকে রাজনৈতিক দমনপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পিআরবিসহ প্রচলিত যাবতীয় বিধি লঙ্ঘন করে তারা বিশেষ দলের হয়ে কাজ করেছেন। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন অনেকে।

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত একজন ডিআইজি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা বলপ্রয়োগ করেছেন তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। তালিকার ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। চলমান অভিযানের সময় অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার সম্ভাবনা আছে। বাকিদের ছয় মাসের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। শুক্রবার রাতে দুজন ডিআইজি ও তিনজন পুলিশ সুপারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পলাতক সদস্যদের ধরতে সহযোগিতা চেয়ে ইন্টারপোলে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কয়েকজন দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত পুলিশের ২৫ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আতিকুল ইসলাম, ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণ পদ রায়, খন্দকার লুৎফুল কবির ও মীর রেজাউল আলম, ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, মো. আসাদুজ্জামান, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মোজাম্মেল হক, সরদার রকিবুল ইসলাম ও মো. ইমাম হোসেন এবং অ্যাডিশনাল ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির তাদের মধ্যে রয়েছেন।
কয়েকজনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।’

পুলিশ সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমনপীড়ন চালায়। গুলিতে শিক্ষার্থী ও নিরীহ লোকজন, পুলিশ, আনসারসহ প্রায় ৮০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি ভারতে পালিয়ে যান। পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও চলে যান আত্মগোপনে।

পুলিশ সদর দপ্তরসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থেকে শুরু করে মহানগর পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবলদেরও আসামি করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণপদ রায়, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র‌্যাবের সাবেক ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার, সিটিটিসির সাবেক ডিআইজি আসাদুজ্জামানসহ বেশিরভাগ জেলার পুলিশ সুপার রয়েছেন। যশোর ও গোপালগঞ্জ জেলায় আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশের একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com