পরিবার মানবজীবনের সবচেয়ে পবিত্র প্রতিষ্ঠান। এখানেই মানুষ প্রথম ভালোবাসা শেখে, সহানুভূতির স্বাদ পায়, আত্মত্যাগ ও সহযোগিতার মর্ম বোঝে। সমাজের ভিত্তি গড়ে ওঠে পরিবারকে কেন্দ্র করে। ইসলামেও পরিবারের গুরুত্ব অনেক। পরিবারের শান্তি, শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্য রক্ষা করা মানে একটি সুস্থ সমাজ গঠন করা।
মানুষের জীবন যত জটিলই হোক, দিন শেষে শান্তির আশ্রয় খোঁজে নিজের পরিবারে। কিন্তু সে আশ্রয়টিই অনেক সময় অশান্তির উৎস হয়ে দাঁড়ায়, যখন পরিবারের পরস্পরের প্রতি সম্মান, ধৈর্য, মায়া-মমতা ও ক্ষমার চর্চা হারিয়ে যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারিক জীবনের সফলতা নির্ভর করে পারস্পরিক ভালোবাসা, সহনশীলতা ও দায়িত্ববোধের ওপর। আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন, ‘তার নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে তাদের জন্য জন্য, যারা চিন্তা করে।’ (সুরা রুম : ২১) এ আয়াত স্পষ্ট করে দেয়, পারিবারিক জীবনের মূল ভিত্তি হচ্ছে ভালোবাসা ও দয়া।
পরিবারের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে হলে প্রথমে প্রয়োজন আন্তরিক আচরণ ও কোমল ব্যবহার। ইসলাম শিক্ষা দেয়, কঠোরতা নয়, বরং কোমলতা ও দয়ার মাধ্যমে সম্পর্ককে দৃঢ় করতে হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি)। এ বাণী পারিবারিক জীবনের নৈতিক দিকনির্দেশনা হিসেবে চিরকাল প্রাসঙ্গিক।
পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠা মানে শুধু ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলা নয়, বরং একে অন্যের দুর্বলতা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, প্রয়োজনের সময় পাশে দাঁড়ানো, আর্থিক ও মানসিক সহযোগিতা করা এবং পারস্পরিক পরামর্শের পরিবেশ সৃষ্টি করা। ইসলামে পরামর্শের গুরুত্ব অনেক।
একইভাবে পারিবারিক জীবনে ধৈর্য ও সংযম অপরিহার্য গুণ। মানুষ ভুল করে, কখনো কষ্ট দেয়, আবার কখনো নিজেও কষ্ট পায়। কিন্তু যারা ধৈর্যধারণ করতে পারে, তারাই আসলে সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে।
লেখক : মাদ্রাসাশিক্ষক ও প্রবন্ধকার