রবিবার, ০৪:১৩ অপরাহ্ন, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় আন্তর্জাতিক মান স্থগিত

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করতে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) কিছু মানদণ্ড অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে এটি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। বিশেষ করে এরোড্রোম সনদের আটটি শর্তের অধিকাংশই পূরণ করেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসম্পূর্ণ রেখে এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করা হয়। এসব বিষয় জানার পর গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মৌখিকভাবে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক মর্যাদা স্থগিত করেন। আজ রবিবার এ বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করার কথা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রায় ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী সেবা, লাগেজ হ্যান্ডলিং, নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি এবং ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন না হওয়ায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা এখনই সম্ভব নয় বলে মনে করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বিমানবন্দরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অসম্পূর্ণ টার্মিনাল, নেভিগেশন সিস্টেম, প্রশিক্ষিত জনবল এবং আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবা দেওয়ার মতো ব্যবস্থাপনায় এখনও বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ছাড়া মানসম্মত পরিচালন কাঠামোর অনুপস্থিতি রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরে।

এদিকে বিমানবন্দরটিকে ‘আন্তর্জাতিক’ স্বীকৃতি দেওয়ার পর কোনো দেশি বা বিদেশি এয়ারলাইন্স কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালানোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যগামী ফ্লাইট চালু থাকলেও কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনাকে লাভজনক মনে করছে না বিমান সংস্থাগুলো। শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস চলতি মাস থেকে কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তার আগেই বিমানবন্দরটির ‘আন্তর্জাতিক’ মর্যাদা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হলো।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই কক্সবাজার বিমানবন্দরকে তাড়াহুড়া করে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগটি ছিল ‘অপরিণামদর্শী। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতীয় প্রকল্পে বারবার তদারকির ঘাটতি ‘অগ্রহণযোগ্য’। তারা মনে করেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে রূপ দিতে হলে শুধু অবকাঠামো নয়, প্রশাসনিক সংস্কার, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি। বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রকৃত চিত্র আড়াল করে তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে অবহেলা এবং তদারকির অভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ বলেন, এরোড্রোম সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা, ফ্লাইট অপারেশন, রেসকিউ সুবিধা এবং কারিগরি দিক থেকে নির্দিষ্ট মান অর্জন করতে হয়। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরের এখনও সেই মান অর্জন সম্ভব হয়নি। এটি সরকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের ফল।

জানা গেছে, বিমানবন্দর ও কাস্টমস সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাঠামোর দিক থেকেও যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি কক্সবাজার বিমানবন্দরে। কাস্টমস আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, কোনো বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক রুটে পরিচালনার আগে সেখানে কাস্টমস বন্দর বা কাস্টমস বিমানবন্দর ঘোষণা করতে হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ ঘোষণা দেয় এবং সংশ্লিষ্ট কাস্টমস স্টেশনের সীমানা, কার্যক্রমের সময়সীমা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

আইন অনুযায়ী কাস্টমস বোর্ড সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করে কোনো বন্দর বা বিমানবন্দরকে কাস্টমস এলাকা ঘোষণা করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেখানে ওয়্যারহাউসিং স্টেশন স্থাপন, সরকারি ও বেসরকারি ওয়্যারহাউস পরিচালনার অনুমোদন দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্যিক কার্গো কার্যক্রম পরিচালনা করা আইনগতভাবে সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে কাস্টমস কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ কাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। কোনো বেসরকারি ওয়্যারহাউস বা কার্গো হ্যান্ডলিং সুবিধা চালু হয়নি, এমনকি সীমিত আকারের সরকারি ওয়্যারহাউসের প্রস্তুতিও শেষ হয়নি। ফলে এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যত আইনগত ও প্রশাসনিক- উভয় দিক থেকেই অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরে কর্মরত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এখানে ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল হয়নি, কনভেয়ার বেল বসানো হয়নি, লাইটিংয়ের কাজ হয়নি, ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার প্রটেকশন এবং ফায়ার পাম্পের কোনো কাজ এখনও হয়নি। টার্মিনালে ঢোকার গেটের কাজ এখনও চলমান, টার্মিনালের ফার্নিচার এবং এফডিআই অনেক কাজ বাকি, রানওয়ের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। লাগেজ স্ক্যানিংয়ের কোনো মেশিন এখনও আসেনি। মেটাল ডিটেক্টর এবং সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়নি। এসব কাজ সম্পন্ন করতে এখনও ছয় মাস থেকে এক বছর লাগবে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. নুর-ই-আলম আমাদের সময়কে বলেন, আমরা করণীয় নির্ধারণে সরকারকে চিঠি দিয়েছি। চিঠির জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com