মঙ্গলবার, ০৫:০২ অপরাহ্ন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিন শিক্ষকদের কর্মবিরতি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১১ বার পঠিত

শিক্ষকগণ সমাজ গঠনের কারিগর। তারাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বপন করেন চিন্তা ও মূল্যবোধের ভিত্তি। অথচ এই শিক্ষকরাই যখন রাস্তায় নামতে বাধ্য হন, লাঠিচার্জ ও জলকামানের মুখে পড়েন, তখন সমাজের মৌলিক কাঠামোতে কোথাও না কোথাও গুরুতর অসংগতি আছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন তারই একটি বড় উদাহরণ।

গত রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ অ্যাকশন চালানোর পর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সমাবেশ। আহত হন একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। এরপর তাঁরা আশ্রয় নেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানেই রাত কাটানোর প্রস্তুতি নেন অনেকে। শিক্ষকতার মতো পেশায় নিযুক্ত মানুষ- যাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলেন তাঁদের এমন অবস্থায় আসতে হবে, সেটি লজ্জার।

শিক্ষকদের দাবিগুলো অযৌক্তিক নয়। ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ও ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা কোনো বিলাসী প্রত্যাশা নয়, বরং বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় মৌলিক প্রয়োজন। রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে এই দাবিগুলো পূরণ করা রাষ্ট্রের পক্ষে বোঝা নয়, বরং ন্যায্য দায়িত্ব।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিক্রিয়া এ ক্ষেত্রে আরও সংবেদনশীল ও বাস্তবভিত্তিক হওয়া উচিত ছিল। অথচ দেখা গেল, সকালবেলার ব্যর্থ বৈঠকের পর বিকালেই পুলিশের কড়া অ্যাকশন- যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আন্দোলন দমনে বলপ্রয়োগ কেবল ক্ষোভকে আরও তীব্র করে তোলে, সমাধান আনে না।

শিক্ষকদের অভিযোগ, অনেকবার আশ্বাস দেওয়ার পরও সরকার কথা রাখেনি। বাস্তবতাও তাই বলছে। বারবার আলোচনা ও প্রতিশ্রুতির পরও প্রজ্ঞাপন না আসায় শিক্ষকদের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এই অবিশ্বাস কাটানোর জন্য শুধু কথার আশ্বাস যথেষ্ট নয়, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিক্ষকদের আন্দোলনে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সংহতি জানিয়েছেন। এটি সরকারের জন্য সতর্কবার্তা। আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে শুধু শিক্ষা কার্যক্রমই অচল হবে না, সরকারের প্রতি আস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

শিক্ষাক্ষেত্র কখনই রাজনৈতিক বিরোধ বা প্রশাসনিক ব্যর্থতার বলির পাঁঠা হতে পারে না। শিক্ষক সমাজকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার বা যে কোনো সরকার দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারে না- ইতিহাসও তার সাক্ষ্য বহন করে। এ কারণেই শিক্ষকদের দাবির প্রতি অবিলম্বে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

এটি কেবল অর্থ বরাদ্দের প্রশ্ন নয়, এটি একটি মূল্যবোধ ও দায়িত্বের প্রশ্নও বটে। একটি জাতি তার শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে না পারলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সে জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

শিক্ষক সমাজকে অবশ্যই দায়িত্বশীল অবস্থানেও থাকতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কর্মবিরতির ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। তবে এর সমাধান শক্তি প্রদর্শনের মধ্যে নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমঝোতা তৈরিতে।

সরকার চাইলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সংকট সমাধান সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন জারি, পর্যায়ক্রমিক ভাতা বৃদ্ধি ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপের একটি রোডম্যাপ নির্ধারণ করলে উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হবে।

একটি টেকসই ও উন্নত রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হলো শিক্ষায়। আর এই শিক্ষার মূল চালিকাশক্তি শিক্ষক সমাজ। তাঁদের মর্যাদা ও ন্যায্য দাবি রক্ষায় রাষ্ট্রের সাড়া দিতেই হবে; বিলম্ব হলে এর মূল্য দিতে হবে গোটা জাতিকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com