কপালে ছোট একরঙা টিপ, কানে দুল, গলায় চিকন চেইনে ছোট্ট লকেট আর হাতে দুই গোছা চুড়ি- এমন সাজে সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা মেয়েটির নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র লাবণ্য। অন্যদিকে ‘রক্তকরবী’র নন্দিনী যেন চিরায়ত বাঙালি নারীর স্নিগ্ধ রূপ। পর্দায় কবিগুরুর নায়িকারূপে হাজির হওয়া অভিনেত্রীদের নিয়ে এই আয়োজন। লিখেছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
শৈশব থেকেই কবিগুরুর একনিষ্ঠ ভক্ত সাদিয়া ইসলাম মৌ। রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতা, গল্প ও উপন্যাস তিনি এখনো নিয়মিত পাঠ করেন। অবসর পেলেই কবিগুরুর বই তার একান্ত সঙ্গী হয়ে থাকে। রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রতি দুর্বলতার কারণেই তিনি কবিগুরুর নাটকে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে আছে- ‘মণিহারা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘বদনাম’ ও ‘দর্পহরণ’। রবীন্দ্রগল্পে অভিনয় প্রসঙ্গে সাদিয়া ইসলাম মৌ বলেন, ‘তার মতো এমন বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী আর কেউ আমাদের সাহিত্যে আসেনি। তার প্রতিটি সৃষ্টকর্ম বৈচিত্র্যময়। রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি গল্পই একটির চাইতে অন্যটি আলাদা। রবীন্দ্রগল্পে এক অন্যরকম মাদকতা আছে। তিনি এত গভীরে গিয়ে নারীদের আবিষ্কার করেছেন, তা খুব কমজনই করতে পেরেছেন।’
ইতোমধ্যে বেশকিছু রবীন্দ্রনাটকে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন অপি করিম। বিশেষ করে তার অভিনীত নন্দিনী চরিত্রটি ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। নন্দিনী চরিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে অপি করিম বলেন, “রবীন্দ্রনাথ কতটা আধুনিক, তা নন্দিনী চরিত্রের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তিনি সময়কে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি শিল্পকর্ম উদ্দেশ্যগত জায়গায় ছিল স্বতন্ত্র। সব সময় তিনি শোষিতের পক্ষে ছিলেন। ‘রক্তকরবী’ নাটকেও তিনি সমাজের শাসকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আমার অভিনয়জীবনে নন্দিনী চরিত্রটি আলাদা স্থান করে আছে।”
রবীন্দ্রনাটকের প্রতি আলাদা আকর্ষণ আছে বলে মনে করেন অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। এ কারণে একাধিকবার কবিগুরুর নায়িকারূপে দেখা গেছে তাকে। ‘রবিবার’ নাটকে বিভা, ‘মাল্যদান’-এ কুড়ানী, ‘রক্তকরবী’র নন্দিনী, ‘একরাত্রি’র সুরবালা, ‘শেষের কবিতা’র লাবণ্যসহ নাটক ও টেলিছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনায়িকা হওয়ার দুর্বলতার পেছনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রবি ঠাকুরের গল্পে যে জীবনবোধ ফুটে আছে, তা চিরকালীন বাস্তব। তাই চরিত্রগুলো যুগ পেরিয়েও পরিচিত অবয়ব নিয়ে ফুটে ওঠে। শতবর্ষ আগের চরিত্রগুলো সমসাময়িক মনে হয়।’
রবীন্দ্রগল্পের নায়িকা হয়েছেন বিদ্যা সিনহা সাহা মিমও। কবিগুরুর ছোটগল্প ‘রবিবার’ অবলম্বনে নির্মিত ‘অপরিচিতা’ নাটকে দেখা গেছে তাকে। মিম বলেন, “বাল্যকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার সঙ্গে পরিচয়। এখন পর্যন্ত কবিতা, গল্পসহ তার অনেক লেখা পড়েছি। আমার লেখালেখির অন্যতম অনুপ্রেরণাও রবীন্দ্রনাথ। ‘চিত্রাঙ্গদা’ গল্পটি আমার বেশ প্রিয়। রবীন্দ্রগল্পে এক সম্মোহনী জাদু আছে। আর চরিত্রগুলোয় আছে চিরচেনা মানুষের ছায়া।”
রবি ঠাকুরের অন্যতম নায়িকা রাশমণির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জ্যোতিকা জ্যোতি। তিনি কবিগুরুর ‘দান প্রতিদান’ নাটকে এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। জ্যোতি বলেন, “রবীন্দ্রসাহিত্য আমার ভীষণ প্রিয়। অবসর সময়ে রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাসই পড়ি। ‘সম্পত্তি সমর্পণ’, ‘দৃষ্টিদান’, ‘দেনা-পাওনা’ ও ‘দান প্রতিদান’-এ অভিনয় করতে পেরে আমি দারুণ আনন্দিত।” রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে বড় পর্দায় নির্মিত হয়েছিল ছবি ‘শুভা’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন পূর্ণিমা। ওই সময় ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ পুরস্কার’ নাটকে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এ নাটকে কাজ করা ছিল চ্যালেঞ্জিং। কবিগুরু যে রূপে চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছেন, তা উপস্থাপন করা সত্যি কঠিন কাজ। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভুলে যেতে না পারলে এমন চরিত্রে অভিনয় করা সম্ভব নয়।’ অন্যদিকে ‘মহামায়া’ নাটকের নাম ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল মৌটুসী বিশ্বাসকে। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের যে কোনো গল্পের নায়িকা হতে পারা অভিনয়শিল্পীর জন্য বাড়তি পাওনা। অভিনয়জীবনের এক ধরনের অপূর্ণতা ছিল, যতদিন না রবীন্দ্র-নাটকে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে। মহামায়া চরিত্রে কাজ করে যে আত্মতৃপ্তি পেয়েছি, তা অন্য যে কোনো ভালো কাজের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।’ এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রবি ঠাকুরের নায়িকারূপে হাজির হয়েছেন জাকিয়া বারী মম ও ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করসহ অনেকে।